‘স্মার্ট বয়’ তরমুজ চাষে দুই বন্ধুর সাফল্য

প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে অসময়ে ‘স্মার্টবয়’ বিদেশি তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক সেলিম রেজা ও ইউসুফ আলী। সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের শালুয়াভিটা গ্রামের দুই বন্ধু এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে জমিতে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে এগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ করেছেন। বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এক হাজার ৫০০ তরমুজ তারা বিক্রির উপযোগী করেছেন। কৃষক দুই বন্ধুর সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক দুই বন্ধু বগুড়ায় বেড়াতে গিয়ে ‘স্মার্টবয়’ তরমুজ চাষ দেখতে পেয়ে উদ্বুদ্ধ হন। পরে তারা বাড়িতে এসে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নেন। পরে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি বার্ষিক লিজ নেন। সেখানে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে এগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের তরমুজ চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাতে তরমুজের গাছ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তারা। আবহাওয়া ভালো হলে তাদের জমিতে চারাগাছ বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে গাছ বড় হলে পুরো জমিতে মাচা তৈরি করা হয়। বর্তমানে মাচার নিচে সারি সারি ঝুলে আছে হাজার হাজার তরমুজ। সেই তরমুজগুলো বড় হওয়ায় নেট দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহের মধ্যেই তাদের তরমুজ বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন এই তরমুজ দেখতে স্থানীয় কৃষকসহ দূর-দূরান্তের পাইকাররা জমিতে আসছেন। তাদের পরার্মশ নিয়ে নিজেদের জমিতে এটি চাষাবাদ করার চিন্তা করছেন তারা।

তরমুজচাষি কৃষক সেলিম রেজা জানান, প্রায় তিন হাজার তরমুজ নেট দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। জমিতে আরও দেড় হাজার তরমুজ বড় হচ্ছে। এগুলোও বেঁধে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে জমির প্রতিটি তরমুজের ওজন তিন থেকে চার কেজির মতো হয়েছে। তিনি আরও জানান, জমিতে পাইকাররা তরমুজের দাম তিন লাখ টাকার ওপর বলেছেন। কিন্তু আমরা নিজেরাই জমি থেকে তরমুজগুলো তুলে বাজারে বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে এই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে পুরো জমির তরমুজ ছয় লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। আরেক কৃষক ইউসুফ আলী জানান, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি জৈব ও কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে বাড়তি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি। এই পুরো চাষাবাদে এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদে আমাদের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হতে পারে। তরমুজের পাশাপাশি তারা পাঁচ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন ও আলু চাষাবাদ শুরু করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন এই চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করার।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (কৃষিবিদ) আনোয়ার সাদাত জানান, দুই উদ্যোক্তা গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিঘা জমিতে এগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রথম বছরেই তারা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে মধ্যে এই ফল তুলে বাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা লাভ হওয়ায় তাদের দেখাদেখি অনেকেই এ চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

তিনি বলেন, তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় তাদের খরচ ওঠে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা লাভ হবে। আমরা চাই কোনো জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। কৃষি উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য।