Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 4:44 am

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য চাই স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা

সুস্বাস্থ্য দেহ মানেই সুস্বাস্থ্য মন। কথাটি চিরন্তন সত্য। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক ও সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৮নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য। স্বাস্থ্যের সার্বজনীন মানদণ্ডে ন্যূনতম অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে স্বাস্থ্যের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সব ব্যক্তির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। স্বাস্থ্য অধিকারের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑমানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ, অক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার সনদ। স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা, স্বাস্থ্য অধিকারের মধ্যে ন্যূনতম যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সে সংক্রান্ত স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অনুপস্থিতি, সবার জন্য স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে, এসব বিষয় বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিকারের ব্যাখা ও প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা আইন ২০১৫ থাকা সত্ত্বেও নেই কোনো সুরক্ষা ও সঠিক তদারকি। বলতে চাচ্ছি বর্তমান স্মার্ট বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের হালচাল। ২০১০ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। প্রায় ১৩ বছর পর ঘোষণা করা হয় স্মার্ট বাংলাদেশ। শিক্ষা, যোগাযোগ, ব্যবসা, বাণিজ্য ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও স্বাস্থ্য খাতে রয়েছে ব্যাপক অবহেলা। দেশের সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটছে একদল দালাল চক্র, অসাধু ব্যবসায়ী ও ডাক্তারদের কর্তব্যের মারাত্মক অবহেলা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের অনাকাক্সিক্ষত মা ও নবজাতকের মৃত্যু খুবই শোচনীয় ও মর্মান্তিক। যা গোটা দেশের মানুষের হƒদয়ে দাগ কেটেছে। যেখানে একজন ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে অনুপস্থিত থেকে এমন মহাযজ্ঞ সম্পাদনের সাহস করেন তা আমার বোধগম্য নয়। এটা কি চূড়ান্ত অবহেলা নয়? এই দায় কার? শুধুই কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নাকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের? শুধু তাই নয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজও একই চিত্র। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরিবর্তে নার্স দিয়ে ভুল অপারেশনের দরুন প্রাণ দিতে হয়েছে এক যুবকের। এছাড়া সম্প্রতি গাজীপুরে এক হাসপাতালে প্রসূতির পেটে মৃত নবজাতকের শরীরের কিছু অংশ রেখেই সেলাই করে ফেলেন। এক সপ্তাহ পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক পুনরায় অপারেশন করেন। এগুলো কি স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবার বৈশিষ্ট্য?

আমরা কি এই রকম স্মার্ট বাংলাদেশ চাই? এমন অসংখ্য জীবন ঝরে যাচ্ছে শুধু ভুল চিকিৎসা, অবহেলা, ভুল প্রেসক্রিপশন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের মাধ্যমে। এমন অহরহ ঘটনা সংবাদপত্রের শিরোনামে প্রতিদিন দৃষ্টিতে আসে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়? অস্ত্রোপচারের সময় পেটের ভেতর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রেখে সেলাই করা, রোগীর পরিবারকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। ওষুধ কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে নিম্ন মানের ওষুধের পরামর্শ দেয়া হাসপাতালগুলোর নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এ সমস্যার প্রধান কারণগুলো আইনের অপ্রয়োগ, দুর্নীতি আর জবাবদিহির অভাব। যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঔষধ প্রশাসন নিয়মিত হাসপাতালগুলোর মান পরীক্ষা করে, ভুয়া সার্টিফিকেট, ভুয়া ডাক্তার শনাক্তকরণ, অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চিহ্নিতকরণ এবং ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রীত ফার্মেসি শনাক্ত করে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাহলে এমন সমস্যা দূর করা অনেকাংশেই সম্ভব।

টেকসই উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো গুণগত মানের স্বাস্থ্যসেবা। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে হাঁটছে। এরকম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি চলমান থাকলে; আদৌও কি তা অর্জন করা সম্ভব? তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট বাংলাদেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা। এ উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

মোহাম্মদ আল-আমিন

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়