Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 2:08 pm

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে উপযোগী পাঠদান পদ্ধতি অপরিহার্য: মোস্তাফা জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ‘ইন্ডাস্ট্রি’র উপযোগী স্মার্ট পাঠদান পদ্ধতি অপরিহার্য। ‘আজকের পৃথিবীতে শিক্ষা মানে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে স্মার্ট জনশক্তি তৈরি করে আমাদের পপুলেশন ডিভিডেন্ডের বিরাট সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। শিক্ষার  ডিজিটাল রূপান্তরের পাশাপাশি ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।’ মন্ত্রী একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি কার্যকর ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন জাতি গড়ে তুলতে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মোস্তাফা জব্বার গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইনক্লুসিভ হাইয়ার এডুকেশন: বাংলাদেশ কনটেক্সট’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী শিক্ষায় প্রথাগত পদ্ধতির সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করা। আমরা কেবল প্রথাগত শিক্ষার সার্টফিকেট দেব, কিন্তু তাদের ডিজিটাল দক্ষতা দেব না, এটা হতে পারে না।’

ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৃথিবীর বড় লাইব্রেরির নাম হচ্ছে ইন্টারনেট। সেই লাইব্রেরি থেকে তথ্য নেয়ার দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা দিতে হবে। প্রচলিত শিক্ষায় এটি দেয়া হয় না।

তিনি বলেন, অতীতের তিনটি শিল্পবিপ্লবে শরিক হতে না পেরে এ দেশের মানুষ প্রযুক্তিতে শত শত বছর পিছিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার পাঁচ বছরের শাসনামলে দেশে ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালুসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশকে শরিক করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্বের যোগ্যতায় উপনীত করেছেন। টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশে গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা এখন অকল্পনীয়। ২০০৮ সালে দেশে সাড়ে সাত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহƒত হতো, বর্তমানে তা তিন হাজার ৮৪০ জিবিপিএসে উপনীত হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নুরুল আলমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন রিসার্স সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ডেভিড জে ব্রাউন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ্র এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর রাশেদা আক্তার বক্তৃতা করেন।

বক্তারা শিক্ষার মাধ্যমে ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন জাতি বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল শিক্ষা বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অপরিহার্য।

বাংলাদেশ শ্রম থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে শ্রম থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দেশে রূপান্তর করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ঢাকার লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে ‘ইনোভেশন টক’ বিষয়ক সেশনে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের বর্ণনা করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১৪ বছর আগে দেশে বিদ্যুতের অধীনে ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৫০ লাখ। আইসিটি বলে কিছুই ছিল না। কিন্তু এখন কম্পিউটার ও আইসিটিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। শেরপুরের কাঁকরকান্দা গ্রামে বসেই এইচএসসির ছাত্রী তৃষ্ণা আইটি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। বর্তমানে শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সরকারের ‘অনন্য দুই উদ্ভাবনী উদ্যোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন আইসিটি বিভাগের তরুণ প্রোগ্রামারদের তৈরি ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া ক্যাশলেস কেনাকাটার ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ এবং ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য ও দূরত্ব কমেছে; সময়, ভোগান্তি ও খরচ কমেছে।

বিষয়ভিত্তিক এই সেশনে তরুণ বাংলাদেশী অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা অংশগ্রহণ করেন। এসময় তিনি নিজের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নানা উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। পরে ঢাকা লিট ফেস্টের দশম এই আসরে আড্ডায় প্রতিমন্ত্রী পলক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। বিজ্ঞপ্তি