Print Date & Time : 3 September 2025 Wednesday 2:09 am

স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে কৃষিতে গুরুত্বের তাগিদ ঢাকা চেম্বারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্মার্ট কৃষির স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষিবিষয়ক আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত শিক্ষা কার্যক্রমে প্রবর্তনে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং টেকসই ও লাভজনক কৃষিব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রচলিত কৃষিব্যবস্থাকে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তর: ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনার গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি এ মন্তব্য করেন। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেলি।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের কৃষি ও এগ্রো-প্রসেসিং খাতের আকার প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রায় ১৫৪টি দেশে ৭০০ কৃষি পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি জানান, জিডিপিতে আমাদের এগ্রো ও ফুড প্রসেসিং খাতের অবদান প্রায় ০.২২% এবং আমাদের কৃষিপণ্যের ভ্যালু এডিশন, পণ্য বহুমুখীকরণ, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার, দক্ষতার স্বল্পতা এবং খাদ্যের মান নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায়ে রাখতে তিনি ন্যানো টেকনোলজি, নতুন নতুন কৃষি মেশিনারিজ ব্যবহারের ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী স্মার্ট কৃষিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি জানান, অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম খাত হলো কৃষি খাত, যেটি জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখার পাশাপাশি ৩৮ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে এবং শিল্প খাতের কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। তিনি বলেন, কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকি জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, সামাজিক সব সূচকে আমরা ক্রমাগত ভালো করছি। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৭টিই কৃষির সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত, তাই কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের স্মার্ট কৃষির দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং এক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ জরুরি। তিনি বলেন, প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা থেকে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থায় উন্নয়ন সময়ে দাবি, যেটি আমাদের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি এ লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ডমিনিকো স্কেলপেলি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশ বাণিজ্যিক কৃষিব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে; তবে সেক্ষেত্রে কৃষি খাতে মূল্য সংযোজনের ওপর জোর দেয়া জরুরি। তিনি বলেন, স্মার্ট এগ্রিকালচারের মূল লক্ষ্য হলো পণ্যের মান উন্নয়ন ও পণ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট অগ্রিকালচারের সঙ্গে বেশি হারে সম্পৃক্তকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্সের ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল। তিনি বলেন, জাতীয় কৃষি নীতিমালা ২০১৮ তে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ২.৮ বিলিয়িন মার্কিন ডলারের কৃষি মেশিনারিজ খাতের বাজার রয়েছে।

সেই সঙ্গে ব্যাংক লোন প্রাপ্তির সহজীকরণ, সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠামো, দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার এবং অটোমেশন স্মার্ট কৃষিব্যবস্থার জন্য খুবই জরুরি। এ ছাড়া সারাদেশে কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য স্মার্ট স্টেকহোল্ডার জরুরি বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।