Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 4:11 pm

সড়কে নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিন

ঈদে কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে এবং কর্মস্থলে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির খবর আমাদের বিচলিত করে। এতে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার ঘটনাও কম নয়। কভিডকালের পর প্রথম ঈদ হওয়ায় এবার সড়কে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকবে। বুয়েটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এ বছর ঈদে প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। তাদের মধ্যে ১৬ লাখ মানুষ গাড়ি পেলেও ১৪ লাখ মানুষ বাস বা ট্রেনের ছাদে, কিংবা লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবে। ফলে ধারণা করা হয়, এবারের ঈদে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ যাত্রী মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে পারেন। তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবারের ঈদে ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক ও নসিমন-করিমন প্রভৃতি ধীরগতির যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা ট্রাফিক আইন তেমন মানেন না। একটু ফাঁক পেলেই গাড়ি ঢুকিয়ে দেন তারা। পথচারীদের জন্য একটু ছাড় দিতে রাজি নন তারা। তাই রাস্তার পাশ ছেড়ে মূল সড়কে দাঁড়িয়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, কিংবা রাস্তা পার হতে হয়। মহাসড়কে এমন ঘটলে দ্রæত চলাচলকারীদের তাৎক্ষণিক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। গতি কমিয়ে দিতে হয়। ধীরগতির যান মহাসড়ক দিয়ে চলাকালে দ্রæতগতির যানের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায়। সাইড দিতে চায় না। হুট করে পার্শ্ব রাস্তা থেকে মূল সড়কে নেমে পড়ে ধীরগতির যান। দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ঈদের সময় পরিবহনকর্মীরা বাড়তি আয়ের আশায় অতিরিক্ত ট্রিপ দিয়ে থাকেন। চালকরা দীর্ঘ সময় নির্ঘুম থাকেন। ফলে গাড়ি চালনাকালে মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তায় যান-নিয়ন্ত্রণে অব্যস্থাপনা, ফেরিঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজট, প্লাজায় দীর্ঘ লাইন প্রভৃতি ঈদযাত্রাকে বিবর্ণ করতে পারে। প্রতি বছর প্রায় একই পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। ফলে স্বাভাবিকভাবে এটিই প্রত্যাশিত যে, তারা সমস্যা-সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে তদারকিও গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্ঘটনা শূন্যের ঘরে নিয়ে আসা হয়তো যাবে না। উন্নত দেশেও এটা হয়ে থাকে। তবে একই ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার কম ঘটে বা এর প্রবণতা কমে আসতে দেখা যায়। আর সেসব দেশে যান্ত্রিক কারণেই প্রধানত ঘটে দুর্ঘটনা; আমাদের দেশের মতো মানুষের (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, চালক, যাত্রী ও পথচারী) কারণে নয়।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোয় এবং ফেরিপারাপারকালে যানজটের সৃষ্টি হলে সময় নষ্ট হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সবাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা সম্ভব।