হঠাৎ কাঁচামরিচ আমদানিতে হতাশ যশোরের কৃষক

প্রতিনিধি, যশোর: চলতি মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে যশোরে নানা জাতের সবজির পাশাপাশি কাঁচামরিচ ক্ষেতের ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে কাঁচামরিচের চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের আশা ছিল ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার। কিন্তু হঠাৎ বাজারে সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় ভারত থেকে শুরু হয়েছে কাঁচামরিচের আমদানি।

এমন খবরে কৃষক হতাশ। তাদের দাবি, ভরা মৌসুমে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করায় দাম না পেয়ে তারা নিশ্চিত আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে। এ অবস্থায় মরিচ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, যশোরে চলতি মৌসুমে ৬৫৫ হেক্টর জমিতে নানা জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। চাষের উপযুক্ত সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলনও ভালো হয়। তবে গত কয়েকদিন অতি বর্ষণের কারণে সবজি ক্ষেতের পাশাপাশি মরিচ ক্ষেতেরও বেশ ক্ষতি হয়। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কিছুটা চিন্তায় পড়লেও বাজারে চাহিদা ও দাম তুলনামূলক বেশি পেয়ে বেশ খুশি ছিলেন তারা। তবে সম্প্রতি সরকার দেশের মরিচের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করায় কৃষক তাদের উৎপাদিত মরিচের কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।

কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহের পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার প্রায় এক বছর পর আবার মরিচ আমদানি শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ছয় দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭৮ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ এসেছে। গত ৯ আগস্ট ১২ মেট্রিক টন দিয়ে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়।

কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর বৃষ্টির সময় মাত্র কয়েকদিনের জন্য বাজারে মরিচের দাম একটু বাড়তি থাকে। এ সময় তারা একটু দাম বেশি পেয়ে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করায় বাজারে তাদের উৎপাদিত মরিচের কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, মরিচ আমদানির বিষয়ে আমরা যে বিরোধিতা করছি তা নয়। তবে কষ্ট হচ্ছে আমাদের ক্ষেতের মরিচ যখন বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে উৎপাদন কমে যাচ্ছে ঠিক তখন আমদানি করা হচ্ছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মরিচে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক কেজি বেগুন যদি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হয়, তাহলে এক কেজি মরিচ ১০০ টাকা বিক্রি হলে অসুবিধা কী?

একই কথা বলেন, ওই এলাকার সবজি কৃষক আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বৃষ্টির সময় মরিচের উৎপাদন একটু কম হয়। আর তখন বাজারে মাত্র কয়েকদিনের জন্য মরিচের দাম একটু বাড়তি থাকে। পরে তা আবার স্বাভাবিক দামে ফিরে আসে। দাম কম হলে কৃষকের লোকসান হয় আর বেশি লাভ হয়। অথচ এসব সংকট পুঁজি করে সরকার বিদেশ থেকে মরিচ আমদানি করে কৃষকের ক্ষেতের ফসলের দাম কমিয়ে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এজন্য সরকারের উচিত এসব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা।

তবে আমদানি মরিচ নিয়ে কৃষক হতাশ হলেও এর কোনো প্রভাব কৃষক পর্যায়ে পড়বে না বলে দাবি করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে মরিচ ক্ষেতে পানি জমে অনেক স্থানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে মরিচের উৎপাদন কমে দাম বেড়েছে। এসব দিক বিচেনায় বাজারে সরবরাহ ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষক হতাশ হচ্ছেন, তবে এ পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। বৃষ্টি কমে গেলে মরিচের উৎপাদন বাড়বে। আর তখন তারা কাক্সিক্ষত দাম পেয়ে লাভবান হবেন। ফলে এ বিষয়ে কৃষককে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন এ কৃষি কর্মকর্তা।