হঠাৎ নিম্নমুখী গরুর মাংসের দাম শীতকালীন সবজিতেও স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে সব ধরনের সবজির দামই কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে শীতকালীন সবজির দাম বেশি কমেছে। মূলত শীতের সবজি বাজারে আসায় কমছে এ দাম। এতে করে কিছুটা স্বস্তি এসেছে ক্রেতাদের মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, শীত আরও বাড়লে দাম আরও কমবে।

এদিকে হঠাৎ করেই রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহল্লায় কমে গেছে গরুর মাংসের দাম। ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজির মাংস কয়েক দিন ধরে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬৪০ টাকায়।

শুধু গরুর মাংস বা সবজির দাম নয়, কমতে শুরু করেছে মুরগির দামও। তবে পেঁয়াজের দাম এখনও ১০০ টাকার ওপরেই আছে। এ নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কমবে, তবে পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা জানা গেছে, বাজারের এ পরিস্থিতি।

শাহজাহানপুরের খলিলের মাংসের দোকানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৯৫ টাকায়। সে মাংস কিনতে সকাল থেকে মানুষ লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ দু-এক কেজি, কেউবা পাঁচ-দশ কেজি মাংসও নিচ্ছেন। এদিকে মালিবাগের খোরশেদ গোস্ত দোকানের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, গ্রামে গরুর দাম কমেছে। তাই দাম কমিয়ে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর বাজার আরও কিছুদিন নিম্নমুখী থাকলে মাংসের দাম আরও কমবে।

নয়াবাজারে মাংস বিক্রেতা রিয়াদুল বলেন, কদিন আগেও গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। তখন দিনে ৫০ কেজি মাংস বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। ৬০০ টাকায় বিক্রি করায় বেচাবিক্রি আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে।

অন্যদিকে সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীত আসতে শুরু করতেই কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। শুরুর দিকে দাম চড়া থাকলেও এখন অনেকটাই আসতে শুরু করেছে নাগালের মধ্যে। গতকাল বাজারে শিম ৬০-৭০ টাকা, মৌ শিম ৬০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ১৪০-১৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ৯০-১২০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা,  মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা,  কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা ও ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা ও চালকুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে।

সবজি বিক্রেতা মো. হায়দার বলেন, দেশি পাকা টমেটো আর নতুন আলু মাত্র আসতে শুরু করেছে, তাই এগুলোর দামটা বেশি। তবে কমে যাবে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই। এছাড়া অন্যান্য সব সবজির দামই কমেছে। দাম বাড়েনি কোনোটারই।

হরতাল-অবরোধের প্রভাবে কোনো কিছুর দাম বেড়েছে কি না বা প্রভাব পড়েছে কি না, জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা মো. সাদ্দাম বলেন, হরতাল-অবরোধের কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। প্রথম দিকে (শুরুর দিকের অবরোধ) সবজি আনতে ভাড়া বেশি লাগত, কারণ কেউ আসতে চাইত না। এখন আর সেরকম কিছু হয় না।

সবজির দাম কমলেও পেঁয়াজের দাম এখনও ১০০ টাকার নিচে নামেনি। বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১১০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলুর দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। গত সপ্তাহের মতো আজও  লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা দরেই বিক্রি করতে দেখা যায়।

আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. কাজল মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম কমার আর কোনো সম্ভাবনা দেখি না। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলে সেগুলোর দাম কমবে, কিন্তু এই পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে আদা-রসুনের দাম। আজকেও ভারতীয় আদা ২০০-২২০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা ও চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী, ১৩০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬৫০ টাকা,  কাতল মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, কাচকি মাছ  ৫০০-৬০০ টাকা, কৈ মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৩০০-৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ১০০০ টাকা ও বোয়াল মাছ এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি ১৫৮-১৭২ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ও কক মুরগির দাম কমে এসেছে।

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে মুদি দোকানের পণ্য। আজকে ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, খেসারির ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪২, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা এবং খোলা সরষের তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।