Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 11:32 pm

হতাশাজনক বাজারে নড়বড়ে বিনিয়োগকারীর আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে। এতে টানা তিন সপ্তাহ ধরে পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। গত সপ্তাহে সূচকের সঙ্গে লেনদেন কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি। এ সময়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। বর্তমানে রাজনৈতিক আন্দোলনের ভয়ে বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। সেই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্বেগ থেকে বাজারে হতাশা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হওয়ার কারণে এ পতন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এই সংকটময় বাজারে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষা রাখতে বিক্রির চাপ অব্যাহত রেখেছে। এতে কেনার বিপরীতে বিক্রির চাপের আধিপত্যের ফলে পতন হয়েছে বলে জানান তারা।

আলোচ্য সপ্তাহে পতনেও ট্যানারি খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে সবচেয়ে বেশি কেনার চাপ থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ থাকায় সাধারণ বিমা খাতের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজারে লেনদেন হয়েছে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এর মধ্যে ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার বিপরীতে কমেছে ১৪৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০৬টির। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ৭৬টির, কমেছিল ৯৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে ও ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৮৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন কমেছে, শতাংশের হিসাবে যা ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরাজমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্বেগ থেকে বর্তমানে বাজারে হতাশা কাজ করছে। এতে ফ্লোর প্রাইস অব্যাহত থাকলেও হতাশাজনক বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ কারণে পুঁজিবাজারের সূচকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে পতন হয়েছে। তাই ঝুঁকি প্রতিরোধে বিনিয়োগকারীরা এই অসুস্থ বাজার থেকে তাদের তহবিল রক্ষা করার জন্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। এতে বিক্রেতারা গত সপ্তাহে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন, ফলে বাজার নেতিবাচক অবস্থায় শেষ হয়েছে বলে জানান তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা ট্যানারি খাতের শেয়ারদর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। খাতটিতে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে তৃতীয় স্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এছাড়া গত সপ্তাহে বিক্রির চাপ সবচেয়ে বেশি থাকা সাধাণ বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল আইটি খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা জীবন বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাক বিবিধ খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল সাধারণ বিমা খাত।

বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১৪ দশমিক ৪১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও শূন্য দশমিক ৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ কমেছে।