কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালা

হতাশা ও ক্ষোভে বঞ্চিত সহস্রাধিক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের পদোন্নতির সর্বশেষ নীতিমালা নিয়ে পক্ষপাতিত্ব বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। মূলত নবম (সহকারী পরিচালক) ও দশম (কর্মকর্তা) গ্রেডে প্রবেশন কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদোন্নতির জন্য প্যানেল ভুক্তির ক্ষেত্রে চাকরিকাল ২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর করা হয়েছে। এই বৈষম্য রীতিমতো সংবিধান, উচ্চ আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। এ পরিস্থিতিতে দশম ও নবম গ্রেডের প্রবেশন পদের কর্মকর্তাদের পুরো চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ যুগ্ম পরিচালক পদে আসীনের সুযোগ পাবেন; যা ভুক্তভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালায় কর্মকর্তা বা সমমান পদ হতে সহকারী পরিচালক বা সমমান এবং সহকারী পরিচালক পদ থেকে উপপরিচালক বা সমমান পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম চাকরিকাল ধরা হয়েছে ৫ বছর। নতুন নীতিমালার আগে এসব কর্মকর্তার পরবর্তী পদে প্যানেলভুক্তির জন্য আড়াই বছর (দুই প্যানেল বা দুই এসিআর সমমান) লাগত। সেই সুবাদে ২০১৯ সালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আড়াই বছরে পরবর্তী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সেই হিসাবে পরবর্তী ব্যাচের প্রবেশন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও নতুন নীতিমালার কারণে তাদের প্যানেল ভুক্তি হতে আরও ও ৩-৪ বছর বিলম্ব হবে।

সংবিধানের ২৯(১) ধারা অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকিবে। অথচ একটি প্রবেশন পদ (১০ গ্রেড) হতে আরেকটি প্রবেশন পদে (৯ম গ্রেড) পদোন্নতিতে ন্যূনতম চাকরিকাল ৫ বছর নির্ধারণ সংবিধান পরিপন্থি। আবার ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস’ মানদণ্ড অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের সাথে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। একইবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালার ১৭নং বিধিতে বলা হয়েছে, পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে এবং শূন্যপদ পূরণ আবশ্যক হলে ফিডার পদের কর্মকর্তাকে ন্যূনতম ৩ বছর চাকরি করা সাপেক্ষে চলতি দায়িত্ব দেয়া যাবে। আর সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির কোটা ১:১ অনুসরণ করেই শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। কিন্তু সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তা পদে ন্যূনতম চাকরিকাল ৫ বছর নির্ধারণ করায় ৭০০টিরও বেশি সহকারী পরিচালক পদ দীর্ঘকাল শূন্য থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪২৫তম সভায় ৯ম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডভুক্ত পদে পদোন্নতির নীতিমালায় সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রভাশালী একজন ডেপুটি গভর্নর নতুন নীতিমালা প্রকাশে একচ্ছত্র প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গভর্নরকেও অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ‘কোনো কর্মচারী সাধারণত যেই আইনে নিয়োগ পান তিনি সেই বিধি মোতাবেক পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু নতুন পদোন্নতি নীতিমালায় আপিল বিভাগের রায়কে অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উদাহরণ স্বরূপ, চলতি বছরের এপ্রিলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজিএ) কর্তৃপক্ষ ‘নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮৩ বাতিল করে ২০২৩ সালের একটি নিয়োগ বিধিমালা জারি করলেও আপিল বিভাগের রায় মেনে আগের আইনে নিয়োগপ্রাপ্তাদের পদোন্নতিতে আগের নিয়ম চালু রেখেছে।  

ভুক্তভোগী কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রবেশন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সাধারণত দুই থেকে আড়াই বছর লাগে। কম সময় বিবেচনায় বুয়েট ও আইবিএর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মেধাবীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বা সহকারী পরিচালক যোগদান করেন। কিন্তু পদোন্নতির নতুন শর্তে তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ অবস্থায় আগামীতে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়ম মেনেই নীতিমালা করা হয়েছে। গভর্নরের নেতৃত্বে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। তবে বৈষম্য ও কারও স্বেচ্ছাচারিতা ইস্যুতে মন্তব্য করব না।’