হবিগঞ্জে সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত

 

 

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ: কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নিমজ্জিত হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে পানি। এতে একমুঠো ধানও ঘরে তোলার সম্ভাবনা নেই।

এমনিতেই গোটা বছরই হাওর থাকে পানির নিচে। জানুয়ারির দিকে একটু শুকায়। এ সময় হাওর পাড়ের মানুষ বোরো রোপণ করেন। এ বোরো ফসলের ওপর নির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ১০ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা, কালনী, রত্না ও খোয়াই নদীর বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল। গত মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আজমিরীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মঙ্গলবার রাত ও বুধবারের ভারি বর্ষণে বর্তমানে তা বিপদসীমার ২১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়। এর আগে দুই হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ২১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া বসিরা নদীর খাল দিয়েও পানি আসছে।

আগাম বানের পানিতে বোরো ক্ষেত প্লাবিত হওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক স্থানে নদীর পানি আটকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকরা। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে নারীরাও বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলেই হাওমাও করে কেঁদে উঠছেন তারা। তারা জানান, হাওরের পাহাড়ি ঢল থেকে ফসল রক্ষা করতে প্রতিবছরই সরকারের তরফ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বাঁধ নির্মাণ করা হয় না। তারা টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

লাখাইর বুল্লা বাজারের আফরোজ মিয়া নামে এক কৃষক জানান, হাওরে একখণ্ড জমিও অবশিষ্ট নেই। প্রতিনিয়ত পানি বাড়ার কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কেননা, কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার পদ্মার পানি এসে জমিগুলো গ্রাস করছে। এমন অবস্থায় তারা কি করবেন বুঝতে পারছেন না। আবদুল আলী নামে এক কৃষক জানান, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ ধানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সবাই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

বানিয়াচঙ্গের মাকালকান্দি গ্রামের কৃষক মধু মিয়া জানান, গ্রামের সবাই নেমেছিলেন হাওরের চারপাশের বাঁধ দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাঁধ দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। নিজেদের চোখের সামনে তলি গেল আধাপাকা ধান। পাহাড়পুরের কৃষক অর্জুন দাস জানান, অন্য বছর বৈশাখের শেষ দিকে পানি আসে। এর আগেই তারা ধান কেটে নিতে পারেন। কিন্তু এ বছর কাঁচা ও আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন তারা কীভাবে বাঁচবেন বুঝতে পারছেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ‘বানিয়াচং উপজেলার মাহতাবপুরে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করায় প্লাবিত হচ্ছে। লাখাইয়ে পানি আসছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের মেঘনা নদীর বাঁধ উপচে ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর প্লাবিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে।