আতাউর রহমান:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্যসহ অন্যান্য বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্বাভাস বা গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় ফেসবুকে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে প্রতারণা করার অভিযোগে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বা পুঁজিবাজারে পরিচিত হল্টেড মিজান নামে এক ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
তথ্যমতে, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে মিজানুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গত বছরে আগস্টের শেষের দিকে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত এক আদেশে দুই সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর (১৮নং আইন, ১৯৬৯) সেকশন ২০ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে উল্লিখিত আদেশটি জারি করা হয়। উল্লিখিত আদেশটি অমান্য করলে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ‘সিকিউরিটিজ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑবিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. কামাল হোসাইন ও এইচ এম সালেহ সাদমান। গঠিত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিজানুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, আয়মান নাহিয়ান কল্লোলসহ অন্যান্য গুজব রটনাকারীদের নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এরই ধরাবাহিকতায় গঠিত তদন্ত কমিটি মিজানুর রহমানের দুটি মোবাইল ফোন নম্বর ও ইমেইল আইডি শনাক্ত করে। তা দিয়ে তার বিও হিসাব খুঁজে বের করা হয়। গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে মিজানুর রহমান কী পরিমাণ লাভবান হয়েছেন, তা বের করা হয়। এরপর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয় কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বা হল্টেড মিজানকে কমিশন যে জরিমানা করেছে, সে বিষয়টি আমার জানা নেই।
এর আগে চলতি বছরের গত ১৭ মে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী মো. মাহবুবুর রহমানকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। বিএসইসির দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়। পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব আইডির বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সে সময় জানায় কমিশন।
এদিকে মিজানুর রহমান বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ভবিষ্যতে বাড়ার তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য ছড়াতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও কমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি’র মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ সেলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে গুজব নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির (বিসিসি) সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে আসছে বিএসইসি।