হাওর এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিন

টেকসই বাঁধ নির্মাণে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী। শনিবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে ভেঙে যাওয়া ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী বলেছেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে আরও কঠোর করে নীতিমালা তৈরি করা হবে। সফলভাবে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সম্প্রতি হাওর এলাকা পরিদর্শনে গেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে সবার সামনে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেন এক কৃষক। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওই কৃষক বলেছেন, ‘চোখের সামনে হাওরে জমির ধান তলাইছে। ধান লাগাইতে গিয়া ৪০ হাজার টাকা ঋণ করছি। সারা বছর সংসার চলে এই ধানে। তাই মনের কষ্টে সব মন্ত্রী সাবরে কইছি।’ এতে বোঝা যায়, হাওর এলাকার মানুষ কী দুর্ভোগের শিকার।

অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণির লোক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছেন। কৃষকদের স্বার্থে রাষ্ট্র প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়, কিন্তু যারা কাজ বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, তারা কৃষকের নয়, নিজেদের স্বার্থই বড় করে দেখেন। পাউবো ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা মিলে হাওরে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেছেন। যে কারণে কাজে দুর্নীতি, অনিয়ম হচ্ছে। বাঁধের নামে টাকার অপচয় ও লুটপাট হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।

একসময় হাওরে ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ হতো। ২০১৭ সালে ফসলডুবির পর ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার এ পদ্ধতি বেশি গ্রহণযোগ্য। দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রথম এক-দুই বছর ভালো হলেও সুযোগসন্ধানীরা এখন এটিকে নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। তবুও কৃষকের আস্থা পিআইসিতেই। তারা বলছেন, বাঁধ নির্মাণে পিআইসি পদ্ধতি রাখতে হবে। তবে অনিময় ও দুর্নীতিমুক্ত করতে পিআইসির সংস্কার দরকার। যারা বাঁধের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সুনামগঞ্জে এবারও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময়মতো শেষ হয়নি। যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার পরিণতিতে বিপর্যয় ঘটলে এর জন্য পিআইসি পদ্ধতিকে দায়ী করা সহজ হবে। ফলে ইচ্ছা করে কোনো মহল বাঁধ নির্মাণপ্রক্রিয়াকে বিলম্ব করছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা জরুরি।

মনে রাখতে হবে, হাওরবাসীর একমাত্র ফসল বোরো ফসল। সেই বোরো ফসল এলাকার মানুষের আশা-ভরসা, জীবন-জীবিকা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলায় হাওর এলাকা রয়েছে। হাওরের ফসল আগাম বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফসল রক্ষা বাঁধ নির্ধারিত সময়ে সংস্কার করার অতি জরুরি। হাওরের আশপাশে নদী দখলমুক্ত করে নদীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। নদী খনন করে নদীর পানির ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে।