জরাজীর্ণ ডাকঘর সংস্কার ও পুনর্বাসন প্রকল্প

হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে ডাকঘর সংস্কার কাজ বন্ধ, অর্থ লোপাটের পাঁয়তারা

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জরাজীর্ণ ডাকঘর সংস্কার ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চলমান সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের অর্থ আÍসাতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশেই এ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কী কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয় ‘বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনস্থ জরাজীর্ণ ডাকঘরসমূহের সংস্কার ও পুনর্বাসন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২৫ কোটি টাকা। সারাদেশের ২৬৭টি জরাজীর্ণ ডাকঘর সংস্কারের জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলার জরাজীর্ণ দুটি ডাকঘর সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ১৭ মে ইজিপি পোর্টালে (টেন্ডার আইডি ৫৫২০৪৯) টেন্ডার নোটিস দেয়া হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৫ জুন টেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়।

টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারদের মধ্যে সর্বনিু দরদাতা ছিল মেসার্স তাহের অ্যান্ড কোম্পানি নামের একট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোচ্চ দরদাতা রুনিক ইঞ্জিনিয়ার্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। ওপেন টেন্ডার মেথড (ওটিএম) টেন্ডার পদ্ধতি অনুযায়ী, যে যত কম মূল্যে শিডিউল জমা দেবে, শর্ত অনুযায়ী সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার কথা থাকলে কাজ পায় ঢাকার গ্রিন রোডের লিটল কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি হাজীগঞ্জ শাহরাস্তির দুটি ডাকঘর সংস্কার কাজের দরপত্রে ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৫ টাকা উল্লেখ করে। পরে এ প্রতিষ্ঠানটিকেই সংস্কারের কাজ দেয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করে ২০২২ সালের ২ মার্চ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শাহরাস্তি উপজেলার ডাকঘরে এক টাকার কাজও করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা ডাকঘরে দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করে নিুমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং বেইজ ঢালাই, কলাম ঢালাই ও ছাদ ঢালাইয়ের বিষয়টি প্রকল্পে নিয়োগকৃত প্রকৌশলীদের অবহিত করার কথা থাকলেও তা না করে ‘জোড়াতালি’ দিয়ে সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে লিটল কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কখনও সংযোগ পাওয়া যায়নি। ডাক বিভাগেরই এক উচ্চপদস্থ  কর্মকর্তা এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও সেই ব্যক্তি কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় জরাজীর্ণ ডাকঘরের সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় অস্থায়ীভাবে বসে ডাক সেবা দিতে দেখা গেছে।

আরও জানা যায়, ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ ডাক বিভাগের জরাজীর্ণ ডাকঘরসমূহের নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে’ সারাদেশে ৩১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। একই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জরাজীর্ণ ২৮৭টি ডাকঘরের মধ্যে একই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১০৪টি জরাজীর্ণ ডাকঘর নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৮৩টি ডাকঘর পুনর্নির্মাণ করা যেতে পারে বলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত সমাপ্ত প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়।

অপরদিকে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের বার্ষিক  কর্মসম্পাদনের সার্বিক চিত্রে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্ভাব্য প্রধান অর্জনগুলোর  (নতুন/সংশোধিত প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন) তালিকায় বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনস্থ জরাজীর্ণ ডাকঘর নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়।

এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনস্থ জরাজীর্ণ ডাকঘর সংস্কার /পুনর্বাসন শীর্ষক (২য় পর্যায়, দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২৫ কোটি টাকা। দেশের ২৬৭টি জরাজীর্ণ ডাকঘর সংস্কারের জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পরিকল্পনা শাখার তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে।

প্রকল্পের কাজ কেন বন্ধ রয়েছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে ডাক অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী (তড়িৎ) মো. চান মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ বন্ধ রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

হাজীগঞ্জ উপবিভাগে কর্মরত ডাকঘর পরিদর্শক কাঞ্চন সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, আপনি এ বিষয়ে সচিব মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলুন। তার নির্দেশেই কাজ বন্ধ রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কখনও সংযোগ পাওয়া যায়নি।