বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর : পুরোনো দালান কম দামে ক্রয় করে সেই দালানের ইটের কণায় তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তা। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণে এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রকৌশলীদের আর্থিক অনিয়মের কারণেই কতিপয় ঠিকাদার রাস্তা নির্মাণে এমন অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে ঘুরে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক স্টেশন বাজারের পূর্ব মাথায় ঠিকাদার পুরোনো দালানের ইট ভেঙে ইটের সঙ্গে বালি মিশিয়ে ট্রাক ভর্তি করছেন। সেই ট্রাক চলে যাচ্ছে চেঙাচল বলশীদ যুগীনগর ভায়া বলশীদ মহিলা মাদ্রাসা সড়কে। সেখানে এলজিইডির এক কোটি ৩৪ লাখ টাকার সড়ক নির্মাণকাজ চলমান। স্থানীয়রা সড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে ঠিকাদারের লোকজনকে নিষেধ করার পরও কারও কথা না শুনে নিজের মর্জিমাফিক পুরোনো দালানের ইট দিয়ে রাস্তা কার্পেটিংয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন ঠিকাদার মেশকাত।
একই উপজেলার ধামরা হতে ফেরুয়া সড়ক উন্নয়ন কাজের একই চিত্র দেখা গেছে। নিম্নমানের ইটের কণা ব্যবহার করা হয়েছে এই সড়কে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিললেও নির্বিকার রয়েছেন এলজিইডি-সংশ্লিষ্টরা। এক কোটি ৮৯ লাখ টাকার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে এখানেও অনিয়মই যেন নিয়ম।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের চিত্র একই। উপজেলার ১১নং পশ্চিম হাটিলা ইউনিয়নের সুহিলপুর বাজার হতে হাটিলা বাদামতলী ভাড়া শাড়াশিয়া কমিউনিটি স্কুল সড়কে নিম্নমানের ইট স্তূপ করে রেখেছেন ঠিকাদার। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (সিবিসি) প্রকল্পে আওতায় এক কোটি ১০ লাখ টাকে ব্যয়ে নির্মিত সড়কে অনিয়ম করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে ঠিকাদার-প্রকৌশলী চক্র। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রেজওয়ানুর রহমানকে এ বিষয়ে অবহিত করার পরও তিনি বরাবরই নির্বিকার রয়েছেন। উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও এলবিসি প্রকল্পের কাজে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে প্রায় দুই কোটি টাকে ব্যয়ে নির্মিত হাজীগঞ্জ-রঘুনাথপুর সড়কের কাজিরগাঁও অংশেও নিম্নমানের কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। যদিও তিনি এসব অভিযোগের সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন। এত অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরও তিনি হাজীগঞ্জে আছেন বহাল তবিয়তে!
হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১নং হাটিলা ইউনিয়নের শাড়াশিয়া কমিউনিটি স্কুল সড়কে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এমন অভিযোগ করার পর প্রকৌশলী রেজওয়ানুর রহমান এ প্রতিনিধিকে সড়ক উন্নয়ন কাজের কোনো তথ্য না দিয়ে অপর এক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সেই প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এক সপ্তাহ পর তথ্য পাওয়া যায়। তবে সড়কে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এবং ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা মুঠোফোনে ধারণকৃত বক্তব্যে উঠে এসেছে। বিভিন্ন অজুহাতে প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম তথ্য না দিয়ে এ প্রতিবেদককে ঠিকাদারের সঙ্গে বসে চা-বিস্কুট খেতে অফার করেন।
ঠিকাদার জাকির চৌধুরী সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আপনি কীভাবে জানেন আমি নিম্নমানের ইট ব্যবহার করছি? নিম্নমানের ইট ব্যবহার করলে সেটা দেখার দায়িত্ব প্রকৌশলীর। আপনি প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এ সড়কেই প্যালাসাইডিং কাজেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন ঠিকাদার জাকির। তবে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ বলাখাল থেকে রামচন্দ্রপুর ব্রিজ পর্যন্ত (বকুলতলা রোড) সড়কটিতে কাজ করার এক দিন পরই গাড়ির চাকার সঙ্গে পিচ উঠে যাওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সড়কে অনিয়মের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর শতভাগ কাজ করা যায় না বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে এলজিইডি চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির শেয়ার বিজকে বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের বিষয়টি দেখব।