নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসেন নানা ধরনের সবজি। পরে খুচরা বিক্রেতারা এখান থেকে মালামাল সংগ্রহের পরই বাড়িয়ে দেন পণ্যের দাম। হাত বদল হলেই দফায় দফায় বাড়ে দাম। সর্বশেষ ক্রেতাদের কিনতে হয় বাজারভেদে উচিত থেকে তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে।
অন্যদিকে, মাছের বাজারেও স্বস্তি মিলছে না। চড়া দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে নানা ধরনের মাছ। পাইকারি বাজারের ১০০ টাকা কেজি দরের মাছ খুচরা বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া হঠাৎ করেই লাগামহীন পেঁয়াজ, রসুন, আদা আর কাঁচামরিচের দাম। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ১৫ টাকা ৪৫ পয়সা। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকা পাল্লা বা ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ২০০ টাকা পাল্লা বা ৪০ টাকা কেজি, কচুর লতি ২০০ টাকা পাল্লা, কাকরোল প্রতি ক্যারেট (২০ কেজি) ৪০০ টাকা বা ২০ টাকা কেজি, ঢেড়স ২০ টাকা, ধুন্দুল ২৫ টাকা, পেপে ২০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি পাল্লা ৩৫০ টাকা বা ৭০ টাকা কেজি, বরবটি ১৮০ টাকা পাল্লা বা ৩৬ টাকা কেজি, পটোল ৯০ টাকা পাল্লা বা ১৮ টাকা কেজি, কুমড়ার জালি ১৪ টাকা পিস, লাউ ২৬ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া (পাঁচ কেজি ওজন) ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা পিস, ফুলকপি ১৫ টাকা, কলা আট টাকা হালি, শসা (দেশি) ৫০, শসা (হাইব্রিড) ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি পাল্লা ১০০ টাকা বা ২০ টাকা কেজি, টমেটো পাল্লা ৩৮০ টাকা বা ৭৬ টাকা কেজি।
আরও দেখা যায়, পাইকারি মাছের বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা) ৪০০ টাকা, চিংড়ি (দেশি) ৪০০ টাকা, ইলিশ (৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম) হালি দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার, রূপচাঁদা (তিনটায় কেজি) ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ছোট ৬৫০ টাকা, কোরাল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, কাতল ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্যদিকে, খুচরা বাজারে সব মাছ চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা) ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (দেশি) এক হাজার টাকা, ইলিশ (৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম) হালি চার হাজার টাকা, রূপচাঁদা (তিনটায় কেজি) এক হাজার ২০০ টাকা, রূপচাঁদা ছোট ৯৫০ টাকা, কোরাল ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, রুই (পাঁচ কেজির ওপর) ৫৫০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সবজি ও মাছের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমাদের এখানে দাম বেশি পড়ে এটা আমরা স্বীকার করি। তবে সেখান থেকে মালামাল আনতে আমাদের গাড়ি ভাড়া দুইগুণ লেগে যায়। এছাড়া সেখানে আরও কিছু খরচ আছে। আমাদের এখানে কর্মচারী খরচ, দোকান ভাড়া আছে। সব মিলে খুব বেশি দামতো আমরা রাখি না। আরও বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনেছি দেখেই বেশি দামে মাছ বিক্রি করছি। আপনারা পাইকারি বাজারে যান। দেখে আসেন। দাম বেশি রাখছি কি-না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যেসব বাজারে গত বুধবার দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্ন মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজি, যা গত বুধবার ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। তবে কিছু কিছু বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বুধবার ছিল ৫৫ টাকা কেজি। তবে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ ছাড়াও বাড়ছে রসুন, আদার দাম।
বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহে এক পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ২০ টাকায়। সেই মরিচের পোয়া এখন ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। এতে মরিচের ক্ষতি হচ্ছে। বৃদ্ধির পানিতে মরিচ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি মরিচ গাছও পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
