হাত বদলে সবজির দাম দ্বিগুণ কৃষকের সঙ্গে ঠকছেন ক্রেতা

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: শালগম, বাঁধাকপি, মুলা, গাজরসহ হরেক রকম শীতের সবজির মধ্যে সর্বস্তরের পাকে রসনা তৃপ্তির প্রধান ফুলকপি। আলুর পরে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া এই সবজিতে ঠকছেন ক্রেতা ও কৃষক। লালমনিরহাটে স্থানীয় পর্যায়ে পাইকারিতে সবজির দাম একেবারে পড়ে গেছে। যদিও তার প্রতিফলন নেই খুচরা বাজারে। সব মিলিয়ে পুরো ব্যবস্থায় কৃষক সর্বস্বান্ত হলেও, যথারীতি ভুগছে কিনে খাওয়া মানুষও। কৃষক ও বাজার ঘুরে দামের তফাত তুলনামূলক অনেক বেশি। ক্ষেত থেকে ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতেই দামের তেলেসমাতি। কৃষকরা ক্ষেত থেকে তুলে পাইকার বা মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে বিক্রি করছেন ২ টাকা পিস, যার ওজন প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি। ওই একই কপি হাত বদল হয়ে একই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। এমন চিত্রই লালমনিরহাটের বেশ কিছু হাঁটবাজার ঘুরে দেখা গেছে।

ক্রেতারা কিনছেন ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস বা ১০ টাকা কেজি দরে। কৃষক বিক্রি করছেন ২ থেকে ৩ টাকা কেজি দরে। এর মধ্যেই কৃষককে হাটের ইজারা, গাড়িভাড়া, শ্রমিক মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে করণীয় কি হতে পারে এমন কোনো কার্যপদ্ধতি ঠিক করতে পারেনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কোনো কৃষক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা কোনো ভর্তুুকি পাবেন কিনা, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই দপ্তরগুলোতে। কৃষক সুধাংশু রায় বলেন, ‘আড়াইশ’ টাকায় এক বস্তা ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে। এক বস্তায় এক থেকে দেড়মণ কপি থাকে। এমন দামে খরচ তোলায় দায় হয়ে যাবে।’

মালতি রানীর স্বামী ক্ষেত থেকে তুলে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের চাপারহাটসহ বেশ কিছু হাটে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পোষাচ্ছে না।’ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সুপারশপগুলো এখন আর নিতে চাচ্ছে না। ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছিলাম। এখন দাম বাড়ানোর জন্য কিছু করতে পারছি না। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক শেখ সাদি বলছেন, ‘সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে আমরা কাজ করি। এ বিষয়ে কৃষি বিপণন এবং কৃষি বিভাগ কাজ করতে পারে। তারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। আমাদের করার কিছু নেই।’ কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সৈয়দ সিফাত জাহান বলছেন, ‘আমরা কৃষকদের ফসল নষ্ট করতে বারণ করছি। দূরবর্তী বাজারে বিক্রি করতে বলছি। প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিই। বাজার মূল্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য আমাদের করার কিছু নেই।’