Print Date & Time : 26 July 2025 Saturday 7:14 am

হামাস প্রধানের মৃত্যুর পর মুখোমুখি ইসরাইল ইরান

আল জাজিরার বিশ্লেষণ
শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ডে ওই অঞ্চলে প্রতিরোধ আরও জোরালো হবে বলেছে জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধিদল। হামাসপ্রধানকে হত্যা করা হয়েছে—ইসরায়েলের এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পর ইরানের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য আসে।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নতুন এক অধ্যায় শুরু করছে তারা। হিজবুল্লাহর দাবি, তারা প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম। ওদিকে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হত্যাকে গাজা যুদ্ধের ‘শেষের শুরু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেয়া এক পোস্টে ইরানের প্রতিনিধিদল বলেছে, প্রতিরোধ শক্তিশালী হবে। তিনি (সিনওয়ার) যুবক ও শিশুদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন, যারা তার দেখানো পথ ধরে ফিলিস্তিনকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে। যত দিন দখল ও আগ্রাসন চলবে, তত দিন প্রতিরোধও জারি থাকবে। শহীদেরা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ৮২৮তম ব্রিগেডের অভিযানে দক্ষিণ গাজায় তিনজন নিহত হন। ওই তিনজনের মরদেহের পরিচয় শনাক্তের পর ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি হামাস। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎসও সিনওয়ারের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত আগস্টে তেহরানে গুপ্তহত্যায় ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর চালানো নজিরবিহীন হামলার মূল কারিগর ছিলেন বলে মনে করা হয়।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। সে সময় গাজায় হামাসের প্রধান ছিলেন হানিয়া।ঐদিন ইসরায়েল তার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়। ইসরায়েল সরকারের তথ্য অনুসারে, এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই হামলার জেরে চলমান গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।গত জুলাইয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তাকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে বড় আকারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে লেবাননের দক্ষিণে ও পূর্বে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত মাসে লেবাননে একটি স্থল অভিযান পরিচালনা করে ইসরায়েলি বাহিনী। আর এর পর থেকে লেবাননের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় দুই পক্ষের মধ্যে কাছাকাছি অবস্থান থেকে লড়াই চলছে।বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি শত্রুপক্ষের সঙ্গে চলমান সংঘাত একটি নতুন এবং ক্রমবর্ধমান অধ্যায়ে রূপান্তরিত হয়েছে বলে ঘোষণা দিচ্ছে হিজবুল্লাহ। আগামী দিনগুলোয় বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে এ ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে হিজবুল্লাহ।সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা বেড়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান মোকাবিলা করার জন্য শত শত যোদ্ধা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

এদিকে গাজা যুদ্ধের শুরুতে হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করেছিলেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে তার একটি ভিডিও বিবৃতি প্রচার করা হয়। ইংরেজি ভাষায় এই বিবৃতিতে তিনি বলেন, সিনওয়ার মৃত। তিনি গাজার রাফায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসী সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন। সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, যদিও এটি গাজা যুদ্ধের শেষ নয়, এটি শেষের শুরু। নেতানিয়াহু এই বিবৃতি দেয়ার আগে সিনওয়ারের মৃত্যুকে হামাসের ‘অশুভ’ শাসনের পতনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী ঘটনা বলে অভিহিত করেছিলেন।