প্রতিনিধি, বগুড়া: বগুড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। দুই হাজার ৯১৯ বর্গকিমি আয়তনের এ জেলায় খেলার মাঠের সংখ্যা খুবই কম। মাঠের অভাবে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। শিশুরা হারাচ্ছে তাদের শৈশব, নেই খেলাধুলা করার মতো পরিবেশ।
স্কুলগুলোয় শিক্ষার অন্যান্য সিলেবাসের সঙ্গে খেলাধুলা কথাটি যুক্ত থাকলেও সেটুকুও হচ্ছে না। অধিকাংশ স্কুলে নেই খেলার মাঠ। যেসব স্কুলে আছে, সেখানেও ছুটির পর মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
মাঠস্বল্পতার কারণে ছেলেমেয়েদের খেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অভিভাবক জুনায়ের বারি। তিনি বলেন, এখন আশেপাশে খেলাধুলা করার মতো তেমন পরিবেশ ও মাঠ কোনোটাই নেই। পাশের গ্রামে একটা ছোট মাঠ আছে, কিন্তু বাচ্চাদের সেখানে পাঠাতে আমরা ভয় পাই। প্রতিদিন পত্রিকা, টেলিভিশনে কিশোরগ্যাং ও গুম-খুনের ঘটনা অহরহ দেখা যায়। আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আমরা অনিশ্চয়তার মাঝে আছি।
ছেলেমেয়েদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিয়ে চিন্তিত আরেক অভিভাবক শিখা রানি। তিনি জানান, এখন ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। স্কুল আর প্রাইভেটের সময় ছাড়া প্রায় সবসময়ই মোবাইল ফোন হাতে। বাসায় ঠিকমতো পড়াশোনাও করে না। পড়ার কথা বললেই মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা অজুহাত দেখায়। ফোন নিয়ে নিলেও রাগ, অভিমানে কখনও কখনও না খেয়ে থাকে। বাইরে খেলাধুলা করার মতো পরিবেশ না থাকায় কিছু বলতেও পারি না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই বাচ্চাকে ফোন করতে হয়।
স্কুলে মাঠ সংকটের কারণ জানালেন বগুড়া ইয়াকুবিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শারীরিক চর্চা বিষয়ের শিক্ষিকা রেবা। তিনি জানান, আগের তুলনায় স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অনেকগুণ বেড়ে গেছে। পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য বাধ্য হয়ে খেলার মাঠেই নির্মাণ করতে হচ্ছে নতুন ভবন। এতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে বিভিন্ন শিফট আকারে নেয়া হচ্ছে ক্লাস। ক্লাস চলাকালে খেলাধুলা করার সুযোগ নেই।
আলতাফোননেছা খেলার মাঠটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় যেকোনো ধরনের ছোট-বড় খেলায় ব্যাপক দর্শক সমাগম হতো। মাঠের কানায় কানায় দর্শক উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করে বাড়ি ফিরতেন। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বগুড়ার এ ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর আগে বহুবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মাঠটির অভিভাবক পৌরসভা তা মূলত কার্যকর করেনি।
ঐতিহ্যবাহী এই মাঠটি সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। এ বিষয়ে পৌর মেয়র বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা সব ধরনের মেলা বসানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। মাঠে হোন্ডার গ্যারেজ, খাবারের দোকান ও কাপড়ের দোকান বসাতে বারণ করেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশ দিয়েছি মাঠটি সংস্কার করতে। মাটি খেলার উপযোগী করে তুলতে চারপাশের ড্রেন লাইটের ব্যবস্থা দিয়েছি এবং খেলার পরিবেশের জন্য মাটি ও ঘাস লাগানোর নির্দেশ দিয়েছি। তারা কাজ করছেন। আমি কয়েক দিন আগে মাঠে গিয়েছিলাম, এলাকাবাসীকে বলে এসেছি, এই মাটি শুধু পৌরসভার নয়, এই মাঠটি বগুড়াবাসীর। তাই আপনারাও সহযোগিতা করুন। আমি আশা করি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মাটিতে খেলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান মাহমুদ খান বলেন, পৌরসভার অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার কারণে মাঠটি ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এই মাঠে আগে খেলা হতো, এখন এই মাঠে মাসব্যাপী মেলা বসে। কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে ফাস্টফুডের দোকান বসে। খেলাধুলার পরিবেশ নেই। মাঠটি পৌরসভার বদলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে হস্তান্তরের জন্য জেলা প্রশাসনে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন পশারী বলেন, নিয়মিত খেলাধুলা করতে না পারলে কিশোর-তরুণদের মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে। তাই এই আলতাফোননেসা খেলার মাঠটি খেলার উপযোগী করে ধরে রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।