সরকারের দেয়া বিভিন্ন ভর্তুকি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে এবং কৃষকদের সাধ্যমতো ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়। কৃষকেরা মাত্র ১০ টাকা জমা দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ও তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকের যেকোনো শাখায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। ব্যাংকগুলো হলোÑসোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক। এ হিসাবে ন্যূনতম স্থিতির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্যাংকগুলোও এই হিসাবের বিপরীতে কোনো ধরনের মাশুল বা ফি আদায় করে না। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জš§নিবন্ধন সনদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া কৃষি উপকরণ সহায়তা সনদের বিপরীতে কৃষককে ব্যাংকে আমানত হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়।
শুরুতে জনপ্রিয়তা পেলেও বেশির ভাগ কৃষক লেনদেন না করায় ব্যাংক হিসাবের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে এ হিসাব খোলার পরপরই কৃষকদের সেচ খাতে ডিজেলে দেয়া ভর্তুকির টাকা জমা পড়ে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে আউশ প্রণোদনার টাকা কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। ২০১৮ সাল থেকে আউশ প্রণোদনার টাকা দেয়া বন্ধ রয়েছে। চলমান কয়েকটি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, ক্ষেত পরিচর্যা, সেচ ও আগাছা দমন এবং সরকারি গুদামে ধান ও গম বিক্রির ভর্তুকির টাকা কৃষকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। কৃষক চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলেন। এছাড়া কৃষকেরা আর তেমন ব্যাংকমুখী হন না।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব: ১ কোটির বেশি হিসাবে গড় জমা মাত্র ৬৩২ টাকা’ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রতিবেদক জানান, দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর পর তাদের হাতে আর অতিরিক্ত অর্থ থাকছে না। জমছে না সঞ্চয়। ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য, দেশে ১ কোটির বেশি কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসেবে রয়েছে। তবে এসব হিসাবে সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৬৫৬ কোটি টাকা। আর জনপ্রতি গড় জমা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৩২ কোটি টাকা। বছরের বেশিরভাগ সময় লেনদেন না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। কৃষক যেন এসব হিসাবে লেনদেন করেন, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ থাকলে সেটিরও দ্রুত প্রতিকার করা উচিত। অভিযোগ রয়েছে, মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রচার না থাকায় এ ব্যাংক হিসাব সম্পর্কে কৃষক জানতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষককে জোর করে ঋণ দেয়া বা সঞ্চয় করানো যাবে না। এ বিষয়ে কৃষককে সহজ ধারণা দিতে পারলেই তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ব্যাংকমুখী হবেন। সহজ ধারণা পেয়ে তিনি ব্যাংকে হিসাব খুললেন। এর পর সেখান থেকে বিরূপ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরে না যান, সে লক্ষ্যেও ব্যবস্থা নিতে হবে।