Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 8:25 am

১০ বছর শিকলবন্দি রাসেল চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সহায়তা

টি এম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট : কৃষক লুৎফর রহমানের ছেলে রাসেল মাহমুদ। জন্ম ১৯৮১ সাল। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখায় থেমে যায় তার শিক্ষাজীবন। পরিবারের দরিদ্রতার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয় কাঠমিস্ত্রির কাজের মাধ্যমে। বড় ভাই উজ্জল হোসেন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তার হাত ধরেই তিনি এ পেশায় আসেন। কিন্তু অজ্ঞাত কোনো রোগে রাসেল এখন পাগলপ্রায়। এজন্য প্রায় ১০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। তার চিকিৎসায় পরিবারটিও এখন নিঃস্ব। রাসেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আশার অনুরোধ পরিবারটির। 

সরেজমিনে জয়পুরহাট পৌরসভার গৌড়িপাড়া মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, একটি মরা গাছের সঙ্গে দুই হাত এবং পায়ে শিকলবন্দি অবস্থায় ধুলাবালি মাখানো খালি শরীরে লুঙ্গি পরিহিত বাড়ির উঠানে মাটিতে শুয়ে আছেন রাসেল মাহমুদ। ডাক দিলে সে ওঠে বসে। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে।

জানা যায়, মাত্র ১৪ বছর বয়সে পাল্টে যায় তার জীবনের হিসাব নিকাশ। কোথা থেকে কী হলো কিছুই বলতে পারে না রাসেল কিংবা তার পরিবার। সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করে। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা দেয়া হলেও কোনো লাভ হয় না। বরং তার পাগলামি বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পরিবারসহ পাড়াপ্রতিবেশীদের মারধর শুরু করলে ২০১২ সাল থেকে তার হাত-পায়ে শিকল পরানো হয়।

জয়পুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গৌড়িপাড়া মহল্লায় শিকলবন্দি জীবন কাটানো রাসেল মাহমুদের বয়স এখন ৪০ বছর। পরিবারের পক্ষ থেকে ৫ বার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েও তার কোনো উন্নতি হয়নি। খাবার দিলে খায়, না দিলে না খেয়ে থাকে। দারিদ্র্যতার কারণে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছে না তার পরিবার। তাই কষ্ট হলেও হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাড়ির বাইরে।

রাসেল মাহমুদের মা জোসনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বর্তমানে গরু-ছাগলও মানুষ বাড়ির বাইরে রেখে রাত কাটায় না। অথচ সন্তানকে শিকল দিয়ে বাইরে বেঁধে রেখে আমাদের বছরের পর বছর রাত কাটাতে হচ্ছে। এটা যে কত কষ্টের তা কাউকে বোঝানো যাবে না। আমার ভালো ছেলেটা মাত্র ১৪ বছর বয়সে চোখের সামনে পাগল হলো। কোনো কারণ বুঝতে পারিনি। নিয়তি মনে করে বুকে পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে আছি।’

জোসনা বেগম আরও বলেন, ‘নিজেদেরই তিনবেলা ঠিকমতো আহার জোটে না। তারপরও প্রায় ২৮ বছর থেকে এ পাগল ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সরকারিভাবে চিকিৎসা সহযোগিতা পেলে হয়তো আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠতো বলেই আঁচলে চোখ মোছেন জোসনা বেগম।

রাসেলের বাবা লুৎফর রহমান জানান, তিন ছেলের মধ্যে মেঝ ছেলে রাসেল ছোটবেলায় ভালো ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ১৯৯৪ সাল থেকে রাসেলের আচরণে পরিবর্তন আসে। এরপর ক্রমান্বয়ে পাগল থেকে উš§াদ হয়ে অত্যাচার শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। বাইরে রেখে চোখে ঘুম আসে না তার। তাই বাড়ির বাইরে একটি টঙঘর বানিয়ে ছেলেকে দেখার জন্য দিন-রাত তিনি সেখানে থাকেন।

প্রতিবেশী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমানে রাসেল উš§াদ হয়ে গেছে। হয়তো উন্নত চিকিৎসা পেলে ভালোও হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো রাসেলের পরিবারে কেউ নেই।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন জানান, জয়পুরহাট পৌরসভার গৌড়িপাড়া মহল্লার রাসেল মাহমুদের বিষয়টি আন্তরিক তার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সরকারি আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাসেলকে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।