নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগে কমপক্ষে ছয় মাসের অভিজ্ঞতা এবং ১০ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার সুবিধা না দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে গঠিত টাস্কফোর্স একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নেও একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে; যাতে প্রারম্ভিক তহবিলের ২৫ শতাংশ জোগান দিলে বিদেশি কোনো কোম্পানি বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হওয়ার সুপারিশ করেছে।
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করতে গঠিত পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স দুটি প্রতিবেদন সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে মার্জিন ঋণবিষয়ক সুপারিশে বলা হয়, গৃহিণী, ছাত্র, অবসরে যাওয়া ব্যক্তিসহ যেসব বিনিয়োগকারীর নিয়মিত আয় নেই তার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে মার্জিন ঋণ পাবেন না। তবে যথেষ্ট সম্পদের অধিকারি হলে তারা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। যথেষ্ট সম্পদের সংজ্ঞা হবে এসএমই বোর্ড সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে মার্জিন ঋণ দেয়া। মেয়াদ শেষে তা নবায়নের সুযোগ থাকবে। ঋণ দেয়ার আগে গ্রহীতা বিনিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাই বা ক্রেডিট রেটিং তৈরি করবে ঋণদাতা কোম্পানি। ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে শুধু পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ শ্রেণির কোম্পানি ও বিবিবি+ রেটিংয়ের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রাখতে পারবে। এর বাইরের কোনো বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রাখতে পারবে না ঋণদাতা কোম্পানি। নগদ টাকা জামানত হিসেবে রাখা যাবে। স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষিত নির্দিষ্ট কোম্পানির বিপরীতে মার্জিন ঋণ দেয়ার সুযোগ রাখা যাবে। এরমধ্যে ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানি, যাদের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩০ এর বেশি না হলে মার্জিন ঋণ নিতে পারবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেলায় পিই রেশিও হতে হবে সর্বোচ্চ ২০। একক কোনো গ্রাহকের বিপরীতে ঋণদাতা কোম্পানি তার মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মার্জিন ঋণ দিতে পারবে।
মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে সম্পদ ব্যবস্থাপকদের বিনিয়োগ করা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার পথ বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে। বর্তমানে অনেক মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক কোম্পানির পরিচালক হয়ে আছেন এভাবে। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপিদের মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনায় অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করেছে টাক্সফোর্স। এছাড়াও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রারম্ভিক তহবিলের ২৫ শতাংশ জোগান দিলে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনায় উদ্যোক্তা হতে পারবে। মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপকরা পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি মুদ্রাবাজার সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত আর্থিক উপাদান নিয়ে কাজ করতে পারবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিমা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও তাদের সাবসিডিয়ারি মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি হতে পারবে। মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করতে পারবে ব্যাংক, ডিজিটাল ব্যাংক, এমএফএস, পোস্ট অফিস, স্টক এক্সচেঞ্জ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংকার, স্টক-ব্রোকার, মোবাইল টেলিকম অপারেটর, অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা প্রতিষ্ঠান (অনলাইন মার্কেটপ্লেস, থার্ড-পার্টি ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি)।
বর্তমানে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংকার, স্টক-ব্রোকার বিক্রি করতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা। বর্তমানে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের কোনো ধারা নেই বিধিমালায়। মিউচুয়াল ফান্ডের আবেদন ফি ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা হবে। আবেদন বাতিল হলে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে। কমিশন সর্বোচ্চ ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। বর্তমানে তা ২১ দিন ও ১৫ দিন রয়েছে। উদ্যোক্তা ও সম্পদ ব্যবস্থাপক বা তাদের পরিচালক ঋণ খেলাপি হলে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনায় অযোগ্য বিবেচিত হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টি ন্যূনতম তিন সদস্যের হতে হবে। এদের মধ্যে একজনের আর্থিক বাজারে নির্বাহী হিসেবে ১০ বছরের ও পুঁজিবাজার বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রতি ত্রৈ-মাসিকে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ১০ বছরের বেশি হবে না। যেকোনো ফান্ডের ঘোষিত মেয়াদ শেষে তা বাদ হবে। বে-মেয়াদি ঘোষণা করতে এক বছর আগে সভা করে ইউনিট হোল্ডারদের মধ্যে অন্তত তিন-চতুর্থাংশের পক্ষে ভোট থাকতে হবে।