শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা লজ্জাজনক বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, আমরা ১১ বছরেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে পারিনি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। ভারতের সঙ্গে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। আমরা সব নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনায় একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। উভয় পক্ষের মানুষের কল্যাণে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা আবশ্যক।
আসামের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ-ভারত নদী (এনএডিআই) সম্মেলনের এক ফাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. মোমেন আরও বলেন, আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তারা প্রস্তুত ছিল, তবুও (তিস্তা) চুক্তি হয়নিÑএটি লজ্জাজনক। ভবিষ্যতে পানির বড় হাহাকার তৈরি হবে, এর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আসাম-বাংলাদেশ এ বছর একই সময়ে বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের পানি নিষ্কাশনে প্রযুক্তিগতভাবে আরও সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যৌথভাবে বন্যার আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা চুক্তি হলে উভয় দেশই জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের ক্রমাগত স্বার্থবৃদ্ধির জেরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে নতুন প্রচেষ্টা শুরু করেছে ভারত। আগামী জুনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় যৌথ পরামর্শক কমিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা-নয়াদিল্লি, যা আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পথ পরিষ্কার করবে। তবে উভয় দেশের মধ্যে একটি বিতর্কিত ইস্যু এক দশক ধরে অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তা হলো তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি।
২০১১ সালে ডিসেম্বর থেকে মার্চে শুষ্ক মৌসুমে নিজেদের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি রেখে তিস্তার ৩৭ শতাংশ পানি ভাগাভাগি করতে সম্মত হয়েছিল ভারত। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতায় চুক্তিটি কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। তার মধ্যে সিকিমে তিস্তার ওপর একাধিক বাঁধ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চীনের ইয়ারলুং সাংপো নদী ভারতে ব্রহ্মপুত্র ও বাংলাদেশে যমুনা হিসেবে প্রবেশ করেছে। এ নদীর চীনা অংশে ভারী অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ বিষয়ে ড. মোমেন দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, এতে নি¤œ অববাহিকার দেশগুলোর ‘ইস্যু’ উপেক্ষা করা হয়েছে। উন্নয়ন অংশীদারদের কঠোর সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তাদের কার্যকলাপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ্য নিজেদের ঘর সামলানোর উপদেশ দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ভালো যাতে না করতে পারি সে জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ ও নীতি তারা নিয়ে আসবে। আমাদের এটি প্রতিরোধ করতে হবে। তারা বরং আগে নিজেদের ঘর সামলাক। তাদের মুদ্রাস্ফীতি অত্যন্ত বেড়ে গেছে। আমেরিকায় চার গুণ বেড়ে গেছে। আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা হিমশিম খাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিদিন এক একটা ইস্যু নিয়ে আসে। আমরা তাদের বলতাম উন্নয়ন অংশীদার। এখন উন্নয়নের এক পয়সাও দেয় না। খালি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে, তার জন্য যত ফরমায়েশ আছে সেগুলো দিচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও গম কেনার জন্য ভারতের কাছে পরামর্শ চেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। আসাম সফরে শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে নদী কনফারেন্সের সাইডলাইনে তার বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি এ পরামর্শ চান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারাও জ্বালানি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে। রাশিয়া জ্বালানি তেল ও গম বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞার জন্য সেটি নিচ্ছি না।
ভারত কীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে দিল্লির কাছ থেকে বাংলাদেশÑতা জানতে চায় উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, তারা বিভিন্ন কৌশল বের করেছে। আমরাও জানতে চেয়েছি সেটা কীভাবে করা সম্ভব। তারা কীভাবে ম্যানেজ করল। ভারত বড় দেশ হিসেবে এটি করতে পেরেছেÑজানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় না। আমরা দরিদ্র, ছোট দেশ আমাদের ওপর করে। মাতবরি কীভাবে করছে সেটা আপনারা দেখছেন। সেটাতে আপনারা (সাংবাদিকরা) উৎসাহও দেন।