নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর পাট দিবসে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। গতকাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
পাট খাতের উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম, পাটবীজ আমদানিতে নির্ভরশীলতা হ্রাস, পাটবীজ উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখায় তাদের এ সম্মাননা দেয়া হবে। এছাড়া পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ৭টি শুভেচ্ছা স্মারক দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘সোনালি আঁশ পাটের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের গুরুত্ব বিবেচনায় পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে সোনালি আঁশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অন্যান্য বছরের মতো এবারও ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস-২০২২’ উদযাপন করতে যাচ্ছে।’’
তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় কৃত্রিম তন্তুর (পলিথিন) ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পাট পণ্যের প্রসার ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাটচাষি, পাটপণ্যের উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা, পাটজাত পণ্যের ব্যবহারকারী, সবাইকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আগামী ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস’ দেশব্যাপী উদযাপিত হবে। এবারের জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ।’
সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, আগামী ৬ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান এবং জেডিপিসি চত্বরে ৬ থেকে ৮ মার্চ তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার পাটপণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের লক্ষ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এই আইনের আওতায় ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাট চাষ নিশ্চিতকরণে বীজ সরবরাহ সঠিক রাখার পাশাপাশি কৃষককে অন্যান্য উপকরণ সহায়তার কারণে সম্প্রতিক বছরগুলোতে পাটের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাট মৌসুমে হাট-বাজারে নজরদারি জোরদার করা, নিয়মবর্হিভূত মজুত ও বিদেশে কাঁচা পাট পাচাররোধে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। বিজেএমসি’র সাময়িক বন্ধকৃত মিলসমূহ অবসায়নের পর সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লিজ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২টি জুট মিলের (বাংলাদেশ জুটমিল, নরসিংদী এবং কেএফডি জুট মিলস, চট্টগ্রাম) ভাড়াভিত্তিক ইজারা প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও আরও দু’টি জুট মিলের লিজ প্রদান প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট ১৩টি মিল লিজ প্রদানের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ইওআই (একপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরও কিছু মিল চালু করা সম্ভব হবে। পুনরায় চালু করা মিলে অবসায়ন করা শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে এসব মিলে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম, মো. মুহিবুর রহমান ও এস.এম. সেলিম রেজা, পাট অধিদপতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমানসহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।