Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 8:41 pm

১২ অক্টোবর বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস

বাত (আর্থ্রাইটিস) হলো মূলত অস্থিসন্ধির প্রদাহ, যা এক বা একাধিক অস্থিসন্ধিকে আক্রান্ত করে। এটা স্বল্পোন্নত দেশে ৫০ থেকে ৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের অক্ষমতার মূল কারণ। বাতব্যথাজনিত অন্য রোগের মধ্যে আর্থ্রাইটিস উল্লেখযোগ্য। মানুষের শরীরের জোড়ার অনেকগুলো রোগ বা সমস্যাকে একসঙ্গে আর্থ্রাইটসি বলা হয়। আর আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে জানার আগে আমাদের মানুষের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মানবদেহে বহু জয়েন্ট বা জোড়া রয়েছে। এসব জোড়া তিন ধরনের। এসব জোড়ায় যদি কোনোভাবে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হয়, ডাক্তারি ভাষায় তাকে আর্থ্রাইটিস বলে। বাংলাদেশে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হলে অনেকে একে বাত রোগ বলে থাকেন।

আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হলে এক বা একাধিক জোড়ায় ব্যথা হবে। জোড়া ফুলে যেতে পারে, গরম হতে পারে, নড়াচড়ায় ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। রোগীর দৈনন্দিন কাজকর্ম ও চলাফেরায় অসুবিধা হবে। অনেক সময় জ্বরও আসতে পারে। পাশাপাশি ক্লান্তিবোধ, অবসাদ, হতাশা ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে রোগী তার দেহের জোড়ার কর্মক্ষমতা বা নড়াচড়ার ক্ষমতা হারান। জোড়া সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে রোগী পঙ্গুত্ববরণ করতে পারেন। অনেক সময় দীর্ঘদিন রোগে ভুগে শরীরের মাংসপেশি শুকিয়েও যেতে পারে।

একশ’র বেশি ধরনের আর্থ্রাইটিস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযেগ্যে হচ্ছে অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এনকালজিং স্পন্ডাইলসিস, গাউট, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস (বাচ্চাদের হয়), সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, স্কে¬রোডারমা ও এসএলই। তাছাড়া অন্য রোগের কারণেও আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

আর্থ্রাইটিস সাধারণত বয়সভেদে বেশি হয়। যে কোনো বর্ণের, যে কোনো বয়সের, যে কোনো সংস্কৃতির মানুষের আর্থ্রাইটিস হতে পারে। তবে কিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আর্থ্রাইটিস বেশি হয়।

 

চিকিৎসা

আর্থ্রাইটিস জোড়ার রোগ। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদি কারও এ-জাতীয় সমস্যা হয় তা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন, যেমনÑরক্ত পরীক্ষা, সেরোলজি পরীক্ষা ও এক্সরে। এছাড়া রোগের লক্ষণ দেখেও বোঝা যায়, কী জাতীয় আর্থ্রাইটিস হয়েছে। প্রকারভেদে কিছু ওষুধ খেতে হয়। যেমনÑব্যথানাশক এনএসএআইডিএস, ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ভিটমিন ডি, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি। আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা। এতে অনেকাংশে রোগীর সমস্যা ও ব্যথা উপশম হয় এবং রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারেন।

চিকিৎসক প্রয়োজন বোধে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশেন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি ও ইন্টারফেরেনসিয়াল থেরাপি দিতে পারেন। বিভিন্ন নিয়মমাফিক কৌশলগত ব্যায়াম ও  ম্যানুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা বহুলাংশে লাঘব হয় ও অস্থিসন্ধি স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। ফলে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তবে এজন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থোসিসের প্রয়োজন হতে পারে। ঠান্ডায় আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও সমস্যা বেড়ে যায়, তাই ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। কুসুম গরম পানির সেক ব্যথা নিরাময়ে র্কাযকর চিকিৎসা। কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত হাঁটা ও চলাফেরা করতে হবে। অত্যধিক পরিশ্রম করা যাবে না। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন  বেড়ে গেলে কমিয়ে ফেলতে হবে। খাদ্য তালিকায় চর্বি ও আমিষজাতীয় খাবার পরিমাণে কমাতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আর্থ্রাইটিস রোধে ভালো ভ‚মিকা পালন করে। দুধ, ডিম, মাছের কাঁটা, হাড়গোড়, বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসব্জিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে, এসব খাবার খেতে হবে। নিচু জিনিস, যেমন পিঁড়ি বা  ফ্লোরে অনেকক্ষণ বসে থাকা যাবে না। অত্যধিক ভারী বোঝা বহন করা যাবে না, ফোম বা জাজিমের বিছানায় শোয়া যাবে না। অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। মদ্যপান, ধূমপান বা তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না।