Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 9:43 pm

১২ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় ৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে যাত্রা শুরু ইউনাইটেড গ্রুপের। সামিট গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে এ যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে এককভাবে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলে গ্রুপটি। বর্তমানে বেসরকারি খাতে দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ইউনাইটেড গ্রুপ। পাশাপাশি ক্যাপাসিটি চার্জ আদায়েও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তারা।

বর্তমানে ইউনাইটেড গ্রুপের ছয়টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ, পায়রায় একটি কেন্দ্রের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আশুগঞ্জের একটি কেন্দ্রের ৭১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ইউনাইটেডের কাছে। সব মিলিয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১২ বছরে গ্রুপটি নিজস্ব কেন্দ্রগুলোর জন্য ছয় হাজার ৬০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করেছে। এছাড়া কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১২ বছরে প্রায় এক হাজার ২৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গেছে গ্রুপটির কাছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে ইউনাইটেড গ্রুপ।

পিডিবির তথ্যমতে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ইউনাইটেড আশুগঞ্জ পাওয়ার ছিল গ্রুপটির একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৫৩ মেগাওয়াট এ কেন্দ্রটির জন্য ওই বছর আট কোটি ৯০ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে পিডিবিকে। পরের (২০১১-১২) অর্থবছরও কোম্পানিটির ওই একটি কেন্দ্রই উৎপাদনে ছিল, যার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ১৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছর উৎপাদনে শুরু করে ইউনাইটেডের আরেকটি কেন্দ্র। ৩০ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি গ্যাসচালিত। এতে ইউনাইটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ মেগাওয়াটে। দুই কেন্দ্রের জন্য সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় ১৯৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। পরের (২০১৩-১৪) অর্থবছরও কোম্পানাটির উৎপাদন সক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন কিছুটা কম হয়। এতে পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় ১৭৮ কোটি আট লাখ টাকা।

যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আশুগঞ্জ গ্যাসচালিত কেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা ১৯৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। এতে ইউনাইটেডের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ১১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরের (২০১৫-১৬) অর্থবছর ৪৫ মেগাওয়াটের আরেকটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসে ইউনাইটেডের। এতে গ্রুপটির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৩ মেগাওয়াট। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ৩৬৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরও ইউনাইটেডের বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন সক্ষমতা একই ছিল। তবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় ৪৩৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ দিকে ২০০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলচালিত আরেকটি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে। এতে চার কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ৪৯৩ মেগাওয়াট। আর সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় ৪৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জামালপুরে ফার্নেস অয়েলচালিত ১১৫ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করে ইউনাইটেড। এতে গ্রুপটির উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৮ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় ৭৬৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৩০০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলচালিত আরেকটি কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করেছে গ্রুপটি। এতে ইউনাইটেডের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫৫ মেগওয়াট। আর এ কেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে এক হাজার ২৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে উৎপাদন শুরু করে ১৫০ মেগাওয়াটের  ইউনাইটেড পায়রা কেন্দ্রটি। এতে গ্রুপটির উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট। এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৩৩৫ কোটি ৪৫ টাকা। আর গত অর্থবছর এ কেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় না পিডিবিকে। এ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি চট্টগ্রামে অবস্থিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) সরবরাহ করে ইউনাইটেড। এ কেন্দ্রের শুধু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করে পিডিবি।

এসব কেন্দ্রের বাইরেও কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ ও এর কয়েকজন পরিচালকের হাতে। ২০১০ সালের এপ্রিলে কেপিসিএল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই কোম্পানির অধীনে একসময় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রের জন্য ১২ বছরে ইউনাইটেড ক্যাপাসিটি চার্জ পায় প্রায় এক হাজার ২৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যদিও সব কেন্দ্রের মেয়াদ গত দুই বছরে শেষ হয়ে যায়। তবে পরে দুটি কেন্দ্রের চুক্তি দুই বছরের জন্য নবায়ন করে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপাসিটি চার্জ বিদ্যুৎ খাতের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে। নানা কারণে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এ অর্থ গুনতে হচ্ছে পিডিবিকে। এমনকি বর্তমানে চাহিদা না থাকায় বা জ্বালানি সংকটের কারণে বেশকিছু বেসরকারি কেন্দ্র বসে থাকছে। এরপরও ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়মিতই পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই এ ধরনের লাইসেন্স প্রদানের আগে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।