নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ জনমিতি লভ্যাংশের সুবিধা ভোগ করছে। অর্থাৎ এখন মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম ও যুবশক্তি সবচেয়ে বেশি বিরাজ করছে। কিন্তু দিন দিন এই সুবিধা ফুরিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে। তাই এই জনমিতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগানো দরকার। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশেষ নজর দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
‘চেঞ্জিং পপুলেশন ডায়নামিকস অব বাংলাদেশ অ্যান্ড পলিসি অ্যাকশনস টু রিয়ালাইজ দ্য ফাস্ট অ্যান্ড সেকেন্ড ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ শীর্ষক সেমিনারে এমন তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল এ সেমিনারের আয়োজন করে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং অতিথি ছিলেন ইউএনএফপিএ’র প্রতিনিধি ক্রিস্টিন বকহার্স। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. কাউসার আহাম্মদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইন্টিগ্রেটিং পপুলেশন ডায়নামিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইস্যুস ইন্টু ন্যাশনাল প্ল্যানস অ্যান্ড পলিসিস (পিডিফোর ডেভেলপমেন্ট) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাইসুর মাহমুদ চৌধুরী, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনএফপিএ’র পিপিআর প্রধান ড. এম. শহিদুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, জনমিতির যে সুবিধা এখন চলছে, সেটি আর ১২-১৩ বছর অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে
সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে কার্যকর করতে হবে। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ জনশক্তি পাঠাচ্ছি। অনেক শ্রমিক সেখানে কাজ করলেও রেমিট্যান্স আসছে কম। কারণ তাদের বেতন কম। এজন্য বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আধা দক্ষ করে হলেও তাদের কিছুটা করে পাঠানো প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও সময়োপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা পড়ালেখা করে দক্ষতা নিয়েই কাজে যোগ দিতে পারে। সেমিনারে আরও বলা হয়, আমাদের শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশের ওপরে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে যুক্ত। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতার শক্তিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং ভোগও বাড়ছে না। তাদের শোভন কাজের দিকে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। ভবিষ্যতে দেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়বে। তাদের নিয়েও ভাবতে হবে।
মূল প্রবন্ধে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয় তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জেন্ডার ব্যবধান পূরণ করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের দেখাশোনা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাশাপাশি ইউনিভার্সের ‘পেনশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০২৩’ কার্যকরভাবে ব্যবহার করারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
প্রধান অতিথির বত্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জনসংখ্যা আমাদের মূল শক্তি ও সমস্যাও। কাজেই এ সমস্যাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জনমিতির সুবিধা আমাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, জনমিতির সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণে নতুন নতুন গবেষণা প্রয়োজন। দেড় বছর পর তৈরি হতে যাওয়া নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কী ধরনের নীতিমালা নিতে হবে, সেসব বিষয়ে ইউএনএফপিএ পরামর্শ দিতে পারে। সেই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন করতে হবে।