১৫০ মিটার এলাকা বিলীন ঝুঁকিতে শত শত ঘরবাড়ি

শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সেতু রক্ষার মূল বাঁধ এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই ভাঙনে ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু। এদিকে এর প্রভাবে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কয়েকটি গ্রাম রয়েছে ভাঙনের কবলে। নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন ও তীব্র স্রোতের কারণে এই ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমানা দেওয়া হয়েছে। সেই বেড়ার ভেতরে সেতু রক্ষা বাঁধে বৃহস্পতিবার থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সেই ভাঙন অব্যাহত ছিল। ফলে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ভাঙন রোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সেতু কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদী থেকে বালি উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও দীর্ঘদিন ধরে অবাধে বালি উত্তোলন করে চলেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বঙ্গবন্ধু সেতুর কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চলছে বালি উত্তোলন। বালি উত্তোলনের কারণে যমুনা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের শত শত ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গত ১৭ আগস্ট স্থানীয় ভুক্তভোগীরা ‘জীবন দেবো তবু বালি দেবো না’ এই সেøাগানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সেই মানববন্ধনে নদীপাড়ের কয়েক হাজার অধিবাসী অংশগ্রহণ করে। পরে ২১ আগস্ট ভুক্তভোগীরা বালি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
মানববন্ধনে সেই সময় অভিযোগ করা হয়, গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মেম্বারের নেতৃত্বে নদীর দক্ষিণ পাশে কালিহাতীর সীমানায় বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বিবিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সরকারদলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বালি উত্তোলন করেন। তাই আমাদের এই অবস্থা। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু।
বালি উত্তোলন ও সেতু রক্ষা বাঁধ এলাকার নাম প্রকাশের একাধিক অধিবাসী জানান, শুকনা মৌসুমে যখন নদীতে পানি কম থাকে, তখন যদি বিবিএ কাজ করত তাহলে এই ভাঙন হতো না। শত শত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হতো না। এর জন্য ওরাই দায়ী।
এ বিষয়ে গোহালিয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার জানান, নদী থেকে এক বছর ধরে বালি উত্তোলন হয় না। বিবিএ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বাঁধের কয়ের মিটার এলাকা ধসে গেছে। এতে ৪২ মিটার গভীরতার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ভাঙন এলাকা বিবিএর সীমানার মধ্যে। কিন্তু মূল গাইডে ভাঙন হয়নি।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে বিবিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে।