চিঠি দিয়েছে বীউনিক

১৫ জীবন বিমা কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ হচ্ছে

রাহমান আরিফ : বিমা খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক)। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবসহ বেশকিছু কারণে এ খাতে স্বচ্ছতা ফেরাতে পারেনি সংস্থাটি। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর কঠোর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিমা খাতের উন্নয়নে কোম্পানিগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে বীউনিক। এর অংশ হিসেবে এবার চাপে পড়েছে ১৫টি জীবন বিমা কোম্পানি। যেসব কোম্পানি কয়েক বছরে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে বিমা দাবি পরিশোধ না করা, বিনিয়োগের নামে কোম্পানির অর্থ সরিয়ে নেয়া ও বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এবার সেই কোম্পানিগুলোর ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বীউনিক।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশনসহ ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানি দেশে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে প্রগ্রেসিভ লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ও সানলাইফসহ বেশকিছু কোম্পানি গত এক দশকে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যার কারণ হিসেবে কোম্পানির মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতা, জীবন বিমা তহবিলের অর্থ সঠিকভাবে বিনিয়োগ না করা ও বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়কে দায়ী করা হচ্ছে। অন্যদিকে সর্বশেষ ব্যবসা শুরু করা কোম্পানি যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, বেস্ট লাইফ, প্রটেক্টিভ লাইফ, স্বদেশ লাইফ ও এনআরবি ইসলামিক লাইফ বিমার বাজারে অনিয়ন্ত্রিত অসম প্রতিযোগিতা, দক্ষ জনবল-নেতৃত্বের অভাব ও কোম্পানির দায়িত্বশীলদের অনিয়মের কারণে ব্যবসায়িকভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি। আর একসময়ে এগিয়ে থাকা জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ও প্রাইম ইসলামী লাইফ বিমা দাবি পরিশোধ করতে না পারা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যে কারণে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো এখন নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বিমা দাবি পরিশোধ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমা গ্রাহকরা। একইভাবে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তিও কমছে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিতর্কিত বিমা কোম্পানিগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছে বীউনিক। কোম্পানিগুলোকে সংকট কাটিয়ে উঠতে করণীয় নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছে। সেইসঙ্গে বিদ্যমান আইন মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু কোনোভাবেই কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগে সোনালী লাইফ ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফসহ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে বিমা বিষয়ে জনমনে সংশয়-শঙ্কা বাড়ছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোতে বিমা করে বিপাকে পড়ছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনে হতাশ হয়ে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই বিষয়টির দিকে নজর দিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীউনিক। বিতর্কিত ও ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়া কোম্পানিগুলোতে নিরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।

বীউনিকের পক্ষ থেকে গত সোমবার ১৫টি জীবন বিমা কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে, সর্বশেষ নিরীক্ষার পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের বিমা ব্যবসা ও কোম্পানির সব ধরনের লেনদেনের তথ্য যাচাই-বছাইয়ের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে বীউনিকের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বীউনিকের গণমাধ্যম পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। তাই কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক লেনদেনে কোনো অসংগতি আছে কি না-তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিমা আইন মেনে কোম্পানিগুলোকে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের জন্য কোম্পানিগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে কোম্পানিগুলোর প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে’।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিমার প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা কাটিয়ে উঠতে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। এতে বিমা গ্রাহক ও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী উভয়ই লাভবান হবে। বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বিতর্কিত এসব কোম্পানির শীর্ষপদে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বীউনিক। তাই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। তাহলে দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।