১৫ বছর ধরে চলছে পশুপাখির ফ্রি চিকিৎসা

আবু সাঈদ সজল, রাবি: টাকার বিনিময়ে নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে প্রায় ১৫ বছর ধরে অসুস্থ পশুপাখির চিকিৎসা থেকে শুরু করে অপারেশনসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে আসছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি বিভাগের অধীন কেন্দ্রটি চলছে। রাজশাহী পবা উপজেলার নারিকেল বাড়িয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত কেন্দ্রটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর গড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক মানুষ সেবা নিতে উপস্থিত হন এখানে। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেবা নিতে ভিড় জমাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ রাজশাহীর আশেপাশের জেলার মানুষ। কেন্দ্রটিতে এ সেবা দেন ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও কৃত্তিম প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ এবং ভেটেরিনারি বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন সরদার।

গত রোববার ১০ মাস বয়সী গরুর বাছুরের জন্য সেবা নিতে আসেন স্থানীয় কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘ছাগল, গরু, মুরগিসহ সবকিছুর সেবা এখানে ফ্রি পাই। হাসপাতালটি চালুর পর থেকেই এ সেবা নিচ্ছি। ফ্রি হওয়াতে আশেপাশের মানুষের ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। পশু ডাক্তার বাড়িতে গেলে তিন থেকে ৪০০ টাকা নিতো। সেই জায়গায় এখানে ফ্রি চিকিৎসাসেবা নিতে পারি।’

ওই এলাকার কৃষ্ঠগঞ্জ থেকে তিনটি অসুস্থ ছাগল নিয়ে এসেছিলেন সাথী বেগম। তিনিও জানান, চিকিৎসা ভালো হয়। মাঝে মাঝে ওষুধগুলোও ফ্রি পাওয়া যায় এখান থেকে।

কেন্দ্রের ইনচার্জ হেমায়েতুল ইসলাম জানান, এ কেন্দ্রে তিন ধরনের পশু-পাখির সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে লাইভ স্টক, পাখি জাতীয় এবং পোষা প্রাণী। তবে শুধু রাজশাহী নয়, নাটোর, নওগাঁসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও অসুস্থ প্রাণীদের নিয়ে হাজির হন কেউ কেউ। প্রাণীগুলোকে স্থানীয় হাসপাতাল বা চিকিৎসকরা এখানে পাঠিয়ে দেন। বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে উদ্ধার করা চিল, বানর, অজগর, নীলগাই, খরগোশ, কচ্ছপসহ, বিভিন্ন পশু-পাখির সেবা নিতেও কর্মকর্তারা হাজির হন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, পশুপাখির চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রটিতে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, গাইনোকোলজি ল্যাব, ডিসপেনসারি, এমনকি এক্সরে মেশিনও। দেশে প্রথমবারের মতো কুকুরের সিজারে সফল হয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। এতে জন্ম নেয় সাতটি বাচ্চা। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো কুকুরের সফল সিজার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্লিনিকটির এ সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর। সেই থেকে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শের সহজলভ্যতায় আশেপাশের মানুষের যেমন সুবিধা হয়েছে তেমনি হাতে-কলমে শিখতে পারছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরাও। এ বিষয়ে ভেটেরিনারি বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন সরদার বলেন, ‘ভেটেরিনারি বিভাগটি মূলত ব্যবহারিক বিষয়। এখান থেকে পাস করে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ডাক্তারি পেশায় যুক্ত হন।’

তিনি বলেন, ক্লিনিকটি থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখা যেমন হচ্ছে, এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটসহ কিছু সমস্য রয়েছে। ক্লিনিকটি উন্নত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার আরও সুযোগ বাড়াবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই দাবি রাখেন তিনি।