১৫ মাস পর জাপানের রফতানি বেড়েছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ১৫ মাস পর জাপানের রফতানি বেড়েছে। ইলেকট্রনিকস ও গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিদেশি চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশটির রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। গত মাসের রফতানির ঊর্ধ্বমুখী চিত্রকে তাই ইতিবাচক দেখছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।

জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বড়েছে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ, যেখানে রয়টার্সের জরিপে এক দশমিক দুই শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছিল। এর আগে নভেম্বরে রফতানি কমেছিল দশমিক চার শতাংশ।

ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চালান বেড়েছে আট দশমিক চার শতাংশ। পরিমাণের দিক থেকে এটি টানা দ্বিতীয় মাসের বৃদ্ধি।

ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বাণিজ্যচুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নেওয়ায় এশিয়ার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে এশিয়া অঞ্চলের উদীয়মান বাজার এ উদ্বেগকে স্থায়ী করবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

নরিনচুকিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ তাকেশি মিনামি বলেন, বিশ্বে এশিয়ার উদীয়মান বাজারের চাহিদা বাড়ায় এশিয়ায় উন্নত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চলতি মাসের প্রথম দিকে জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটাকে মেক্সিকোতে তৈরি গাড়ি রফতানিতে বড় অংকের সীমান্ত করের হুমকি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওই সময় ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও পরিবহন সরঞ্জামের রফতানিমূল্য কমেছে। তবে শিল্পজাত পণ্য ও রাসায়নিকের রফতানিমূল্য কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে ওই সময় ইলেকট্রনিক, ধাতু ও পেট্রোলিয়ামের আমদানিমূল্য বেড়েছে। ব্যাংক প্রতিবেদনমতে, এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও লৌহবহির্ভূত অন্যান্য ধাতুর চাহিদা কমে যাওয়ায় জাপানের পাইকারিমূল্য কমতে ভূমিকা রেখেছে।

দেশি বাজারে দুর্বল চাহিদার কারণে জাপানি কোম্পানিগুলো বিদেশে বিক্রির ওপর অনেকটা নির্ভর করে। দেশটির মুদ্রা ইয়েনের শক্ত অবস্থান ও চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানি ও মূলধন খরচে বাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

রফতানি, কারখানার উৎপাদন ও পরিবারপ্রতি খরচ কমে যাওয়ায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি চাপে ছিল। বিশ্লেষকরা চলতি বছরের শুরুর দিকে বলেছিলেন, বিদেশি অর্থনীতির উন্নতি না হলে এবং ইয়েনের দাম না কমলে চলতি বছরের শেষদিকে জাপানের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মার্কিন নির্বাচনের ফলের পর থেকেই ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা ইয়েনের দাম কমে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের জন্য পণ্য তুলনামূলক সস্তা হয়ে যায়। দেশটির রফতানি খাতের জন্য যা ইতিবাচক।

জাপান ম্যাক্রোর প্রধান উপদেষ্টা তাকুজি ওকুবো বলেন, দেশটিতে খরচের হার খুবই সামান্য এবং মূলধন ব্যয়েও যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি নেই। তাই রফতানির ওপরই জাপানকে নির্ভর করতে হচ্ছে।

প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্ট আবের মন্ত্রিসভা চলতি বছরের আগস্টে একটি অর্থনৈতিক উদ্দীপক প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যার আর্থিকমূল্য প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন ডলার। তবে অর্থনীতিবিদরা এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আশাবাদী নন। এছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে দুই শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ বৃদ্ধি দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।