১৫ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে এক বছরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রণোদনা বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্যবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক তিন বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের রেট ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে যখন বেশি থাকে, তখন বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। এখন এক ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ব্যাংক ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা দিচ্ছে। সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। সব মিলিয়ে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা পান। তবে এখান থেকে কেটে নেয়া হয় ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ। কিন্তু খোলা বাজারে ডলার ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মানে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ভিন্ন পথে রেমিট্যান্স এলে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত জুনে ১৮৩ কো?টি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার কম। চলতি বছর মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। আর আগের বছরের জুনের তুলনায় ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার কম। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৯৪ কোটি আট লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৩ দশমিক ৪৫ টাকা ধরে)। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ এ এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপর।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ও জানুয়ারিতে এসেছিল ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার ও সবশেষ জুনে এসেছে ১৮৩ কো?টি ৭২ লাখ ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিক কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এই রেটেই রেমিট্যান্সের বিনিময় করা হয়।

তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৫ টাকা, নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকায় আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকায়।