Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 10:25 am

১৭ প্রকল্পের বিস্তারিত প্রস্তাব চেয়ে ভারতের চিঠি

ইসমাইল আলী: ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে ৪৫০ কোটি ডলারের সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়। তৃতীয় এলওসির আওতায় ওই চুক্তিতে ১৭ প্রকল্পে দেশটির ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। চাওয়া হয়েছে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত প্রস্তাব (ডিপিপি)।

চিঠিতে ইআরডি জানায়, ভারতীয় অর্থায়নে তৃতীয় ঋণচুক্তির আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউটি প্রেরণ করা হলো। এতে উল্লিখিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর ডিপিপি বা টিপিপি প্রণয়নপূর্বক অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকল্পগুলোর ডিপিপি বা টিপিপি জরুরি ভিত্তিতে এ বিভাগে প্রেরণের জন্যও নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।

এমওইউতে বলা হয়েছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারত সরকার আগেও সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগের রাষ্ট্রীয় ঋণ বা এলওসির অবদান বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তৃতীয় এলওসি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে বিবেচনায় রেখে এক্ষেত্রে নিম্মোক্ত শর্তে এলওসি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

শর্তগুলো হলো তৃতীয় এলওসির পরিমাণ হবে সাড়ে চার বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার। এক্ষেত্রে সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে আগের ঋণের অনুরূপ। আর তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নকালও আগের মতোই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এ ঋণের সুদহার হবে ১ শতাংশ। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে বাংলাদেশকে। ঋণের আওতায় ৭৫ শতাংশ পরামর্শক ফি ও ৬৫ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।

চুক্তির শেষে ১৭টি প্রকল্পের তালিকাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়কের রয়েছে তিনটি। এগুলো হলোÑবেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাটিয়া পাড়া-ভাঙ্গা সড়ক চার লেন করা, রামগড়-বারইয়ার হাট চার লেনে উন্নীতকরণ ও কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল সড়ক চার লেনে উন্নীত করা। রেলওয়ের দুই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ ও ঈশ্বরদী আইসিডি নির্মাণ।

বিদ্যুৎ বিভাগের দুই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পিভি পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ ও ভারত-বাংলাদেশ (এনই-বাংলাদেশ-এনইআর) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উন্নয়ন। এছাড়া রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ সহায়তা দেবে ভারত।

প্রস্তাবিত তালিকায় ভারতের জন্য মিরসরাইয়ে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়ন করা হবে ভারতের ঋণে। আর তৃতীয় এলওসির তালিকায় নৌমন্ত্রণালয় প্রকল্প রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো পায়রা বন্দরে বহুমুখী টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক নির্মাণ ও বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি প্রকল্পে সহায়তা করবে ভারত। আর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পও অর্থায়ন করবে ভারত।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, তৃতীয় এলওসিতে ভারতের ঋণে তিনটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা আগেই প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন ইআরডির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তারিত প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই তা ভারতের হাইকমিশনের মাধ্যমে দেশটিতে পাঠানো হবে।