১৮০% নির্মাণব্যয় ওঠার পরও বাড়ছে টোলহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গত জুনে। গত ২ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। ১৬ নভেম্বর থেকে বর্ধিত টোলহার কার্যকরের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। যদিও হঠাৎই তা স্থগিত করে বিবিএ। তবে পুনরায় বর্ধিত টোলহার কার্যকর করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। আজ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট (১৯ নভেম্বর) থেকে নতুন টোলহার কার্যকর করা হচ্ছে।

যানবাহনভেদে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলহার বাড়ানো হয়েছে ১০-২৫ শতাংশ। পাশাপাশি বিবিএ’র অধীন মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত মুক্তারপুর সেতুর টোলও আজ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বাড়ছে। এ সেতুটির টোলহার বাড়ছে যানবাহনভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।

তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয়ের ১৮০ শতাংশ অর্থ টোল হিসেবে আদায় হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছর সেতুটি থেকে টোল আদায় হয় ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সেতুটিতে এটি টোল আদায়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর আগের (২০১৯-২০) অর্থবছর এ সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছিল ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুটিতে টোল আদায় বেড়েছে ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সেতুটিতে পারাপারের জন্য বাইকের টোল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হচ্ছে। হালকা যান তথা কার ও জিপের টোল ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। আর মাইক্রোবাস ও পিকআপের (দেড় টনের কম) টোল ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট বাসের (৩১ আসন বা তার কম) টোল ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা এবং বড় বাসের (৩২ আসন বা তার বেশি) টোল ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সেতুটিতে ছোট ট্রাকে (দেড় থেকে ৫ টন) টোল ছিল ৮৫০ টাকা, যা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকে (৫ থেকে ৮ টন) টোল এক হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২৫০ টাকা আর বড় ট্রাকে (৮ থেকে ১১ টন) টোল এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে তিন এক্সেলের ট্রাক তথা কাভার্ড ভ্যানের টোলহার দুই হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নতুন হার।

একইভাবে ট্রেইলারের টোলহারও নতুন নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল হবে তিন হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য তিন হাজার টাকা, সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকা করে যোগ হবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন পারাপারের জন্য রেলওয়েকে আগে বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা চার্জ দিতে হয়। নতুন হারে তা বেড়ে হলো এক কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিএ’র নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক শেয়ার বিজকে বলেন, ডলারের বিনিময় হার পরিবর্তন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেতুর ঋণ পরিশোধ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। আবার সেতু কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে বিবিএ’র উদ্বৃত্ত অর্থ গত দুই বছর ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হচ্ছে। ফলে তহবিলের অভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন বিঘিœত হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়েই টোলের হার বৃদ্ধি করতে হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, মুক্তারপুর সেতুতে ভ্যান (তিন চাকা বিশিষ্ট)/বাইকের টোলহার ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে, সিএনজি অটোরিকশায় টোল ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, কার, টেম্পো, জিপ, মাইক্রো ও পিকআপে টোল ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা এবং বড় ট্রাকে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর বাইরে মুক্তারপুর সেতুতেও তিন এক্সেলের ট্রাক ও ট্রেইলারের জন্য নতুন টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন এক্সেলের ট্রাকের টোল ৮০০ টাকা ও চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকার সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য ৫০০ টাকা করে যোগ হবে।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের জুনে। এর প্রায় ১৩ বছর আড়াই মাস পর সেতুটির টোলহার বাড়ানো হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তা কার্যকর করা হয়েছিল। যদিও এবার ১০ বছর আড়াই মাস পর টোলহার বাড়ানো হলো। আর ২০০৮ সালে উদ্বোধনের পর থেকে মুক্তারপুর সেতুর টোলহার বাড়ানোই হয়নি।