নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত ১৮ জনের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিসি) ৬০ দিনের মধ্যে এ অর্থ সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় জনস্বার্থে করা রিট আবেদনে জারি করা রুল শুনানির পর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল হালিম। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের পক্ষে ছিলেন এমজি মাহমুদ শাহীন। আর বিআইডব্লেউটিসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রশিদ।
আব্দুল হালিম বলেন, এ ঘটনায় নিহত ১৮ জনের পরিবারকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেরি হলে ব্যাংকের সুদের হার অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুদ গুনতে হবে।
আইনজীবী হালিম বলেন, ক্ষতিপূরণের রায়ে এটি নতুন একটি বিষয়। সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে গড়িমসি করে বা অনেক সময় দিতে চায় না। সেজন্য অনেক সময় আদালত অবমাননার আবেদন করতে হয়।
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে দেরি করলে সুদ গুনতে হলে কর্তৃপক্ষগুলো সতর্ক থাকবে, সোচ্চার হবে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এ-সংক্রান্ত আটটি রায় আমি তুলে ধরেছি রুল শুনানিতে। তা গ্রহণ করে এ রায় দিলেন আদালত।
বিআইডব্লিউটিসির আইনজীবী সাইফুর রশিদ বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।
২০১৭ সালে এপ্রিলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে প্রায় ৩৫০ যাত্রী নিয়ে একটি সি ট্রাক সন্দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়। সন্ধ্যায় জাহাজটি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের কাছে পৌঁছায়। জাহাজ সরাসরি ঘাটে ভিড়তে না পারায় সি ট্রাকটি ঘাটের কিছুটা দূরে থামিয়ে যাত্রীদের নৌকায় করে ঘাটে নেয়া হচ্ছিল।
এ রকম একটি নৌকা যাত্রী নিয়ে ঘাটে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড বাতাসে উল্টে যায়। পরে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ধারণা করা হয়, উল্টে যাওয়া নৌকায় ৪০ জন যাত্রী ছিল। পরে শেষ পর্যন্ত ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর নিহত ওই ১৮ জনের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত ১৩ এপ্রিল রুল জারি করেন।
১৮ যাত্রীর প্রাণহানির কারণে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং যাত্রী পারাপার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নৌপরিবহনসহ চলাচলকারী সব ধরনের নৌযানে নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকারী ডিভাইস সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে নাÑজানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
সেই রুলের শুনানি শেষে তা যথযথভাবে ঘোষণা করে বুধবার রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
