Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 7:48 pm

১৮ বছর পর ভোজ্যতেল ব্যবসায় আবুল খায়ের গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: প্রতি বছর ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর ভোগ্যপণ্যের বাজারের আকারে সবচেয়ে বড় ভোজ্যতেল (পাম ও সয়াবিন) বাজার। দেশে বর্তমানে ভোজ্যতেলের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার। এ বাজারের দাপুটে খেলোয়ার সিটি, মেঘনা, টিকে, বাংলাদেশ এডিবল ও এস আলম গ্রুপ। এ তালিকায় নতুন করে আবারও যুক্ত হলো চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ আবুল খায়ের। যদিও গ্রুপটি ১৮ বছর আগে ভোজ্যতেলের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড  ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানি হয় প্রায় ৩৩ লাখ টন। আর ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর সয়াবিন ও পামতেল আমদানি হয়েছে ২২ লাখ টন। এতে ব্যয় হয়েছিল ২১৫ কোটি মার্কিন ডলার। এগুলোর শুল্কায়নমূল্য ও রাজস্ব হিসাবে আমদানি ব্যয় দাঁড়ায় ২৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর পরিচলন ও মুনাফাসহ হিসাব করলে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার। যদিও দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে আমদানি হয় ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টন। এর মধ্যে পাম অয়েল ১৮ লাখ টন এবং সয়াবিন ১২ লাখ টন। এসব চাহিদার সিংহভাগ তেল সরবরাহ করে তেলের বাজারের সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল এবং এস আলম গ্রুপ। ভোজ্যতেলের ব্যবসা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ায় এ ব্যবসায় অস্থিরতা বেশি বিরাজ করে। গত দুই দশকে ভোজ্যতেলের ব্যবসায় সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল এবং এস আলম গ্রুপ এগিয়ে গেছে, আবার মোস্তফা গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ, নূরজাহাজ গ্রুপ ও এসএ গ্রুপ লোকসানে পড়ে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ে। এ তালিকায় আবারও নতুন করে বিনিয়োগের খাতায় যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস।

জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের বালাগামওয়ালা ভেজিটবেল অয়েল প্রোডাক্টস কারখানা দিয়ে ভোজ্যতেলে হাতেখড়ি হয় আবুল খায়ের গ্রুপের। অসম প্রতিযোগিতা ও অস্থিতিশীল বাজার হওয়ায় ২০০৫ সালে বাজার থেকে আবুল খায়ের গ্রুপ নিজেদের গুটিয়েও নেয়। এ তালিকায় আবারও নতুন করে বিনিয়োগের খাতায় যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ মার্কা ব্র্যান্ডের স্টারশিপ সয়াবিন তেল বাজারজাত করার ঘোষণা দিয়েছে। স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস এরই মধ্যে বাজারে মোড়কজাত ও ড্রামে সয়াবিন তেল বাজারজাত করতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি শুরু করে। এরপর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৮২৮ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৭২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেল আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাজারজাতকরণের জন্য প্রায় ৬৫ হাজার টন তেল খালাস করেছে। এমইবি গ্রুপের বন্ধ থাকা একটি পরিশোধন কারখানা ভাড়া নিয়ে সেখানে ভোজ্যতেল পরিশোধন করে বাজারজাত করছে।

এ বিষয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের দায়িত্বশীল পরিচালক ও কর্মকর্তাদের মন্তব্য নেয়ার বিষয়ে পাহাড়তলী আবুল খায়ের গ্রুপের করপোরেট অফিসে যোগাযোগ করে হলে নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, মিডিয়ায় স্যাররা কথা বলেন না। ফলে দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ে যুক্ত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ আবুল খায়ের গ্রুপ। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস এরই মধ্যে বাজারে মোড়কজাত ও ড্রামে সয়াবিন তেল বাজারজাত শুরু করেছে। যদিও একসময় আবুল খায়ের ভোজ্যতেলের ব্যবসায় ছিল, পরে ভারী শিল্প অর্থাৎ ইস্পাত ও সিমেন্ট খাত নিয়ে মনোযোগী বেশি ছিল বলে তখন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় মনোযোগ দেয়নি। এখন আবারও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছে। এর মধ্যে আমরা আটা ও ময়দা ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি। আসলে বাজার তো বড় হচ্ছে, তাই বিনিয়োগ বাড়ছে।