২০০৭ সালের অনবোর্ড চার্জে কাজ করছেন বার্থ অপারেটররা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০৭ সাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। তখন থেকে শিপিং এজেন্টরা জাহাজের অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জের অতিরিক্ত চার্জ বাড়ায়নি, প্রতি কনটেইনারে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছর শেষে ১০ শতাংশ বাড়ায়। তাই বার্থ অপারেটররা কনটেইনার প্রতি পাঁচ ডলার করে বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু শিপিং এজেন্টরা বাড়াতে রাজি নয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থের ছয়টি জেটিতে কনটেইনার জাহাজ ভিড়ে। বন্দরের নিযুক্ত বার্থ অপারেটররা জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো ও নামানোর কাজটি করেন, এজন্য প্রতি কনটেইনারে অনবোর্ড সার্ভিস চার্জ ও শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৫৫৯ টাকা দেয় শিপিং এজেন্টরা। এ টাকা থেকে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ পায়, বাকি ৪০ শতাংশ শ্রমিকদের মজুরি হিসাবে পায়। গত ২০০৭ সাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছর শেষে ১০ শতাংশ বাড়ায়। কিন্তু বার্থ অপারেটরের সার্ভিস চার্জ গত ১৮ বছরের বাড়ানো হয়নি।

বন্দর বার্থ অপারেটররা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল ও জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ করে বন্দরের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ বার্থ অপারেটরস ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটররা। ২০০৭ সাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। তখন থেকে শিপিং এজেন্টরা জাহাজের অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জের অতিরিক্ত চার্জ বাড়ায়নি, বিপরীতে প্রতি কনটেইনারে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছর শেষে ১০ শতাংশ বাড়ায়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বর্তমানে বার্থ অপারেটর সেবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চুক্তি সংশোধন করে ৫৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির দাবি তোলে বন্দরে নিয়োজিত বার্থ অপারেটররা। এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিল বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই সময় আগাম জানানো হয়েছিল, সেবা চার্জ বৃদ্ধি করা না হলে চুক্তির বাইরে বার্থ অপারেটররা শিপিং এজেন্টদের যেসব অতিরিক্ত কাজ তারা করে দেন, সেসব আর চলমান রাখা সম্ভব হবে না।

এদিকে জাহাজের বার্থ অপারেটরদের জাহাজে অন বোর্ড অপারেশন বিল পরিশোধ করে শিপিং এজেন্টরা। তারা উভয় পক্ষকে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) গত বছরের ১২ নভেম্বর এক সভায় বসেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্থ অপারেটরকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে অনবোর্ড অপারেশন হ্যান্ডলিং রেট বৃদ্ধির পূর্ণাঙ্গ যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিখিত প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়। সেই প্রস্তাবনা বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টদের কাছে পাঠায় এবং বার্থ অপারেটরদের যৌক্তিকতার ওপর শিপিং এজেন্টদের মতামত লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। উভয় পক্ষের লিখিত মতামত নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আবার সভা হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তার আগেই দুই পক্ষ একে অপরকে অভিযোগ করছেন। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে বন্দর ভবনে। সেই বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কনটেইনার এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। বার্থ অপারেটরদের অভিযোগ বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কেউ আসেননি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা গেলে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই বৈঠকটিতে শিপিং এজেন্টদের যোগ দেয়ার কথা ছিল না। যদিও গত রোববার এ বিষয়ে বন্দরে একটি কমিটির মিটিং হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০৭ সাল থেকে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিপিং এজেন্টরা জাহাজের অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জের ওপর এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ বাড়ানো হয়নি, যেখানে তারা ওই অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছরান্তে ১০ শতাংশ বাড়ায়। সময় হিসাবে অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। সেই বিবেচনায় আমরা কনটেইনার প্রতি পাঁচ ডলার করে বাড়িয়ে দিতে বলেছি। ততটুকু হয়তো বাড়াবে না। তবে গতকাল বন্দরের মিটিংয়ে জানিয়েছে, শিপিং এজেন্টরা বাড়াবে বলেছেন।

অপরদিকে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আরিফ শেয়ার বিজকে বলেন, বার্থ অপারেটররা এখানে এককভাবে চার্জ বাড়াতে বলেছেন। আমরা বলেছি, যতটুকু যৌক্তিক ততটুকু বাড়ানোর জন্য বলেছি। কারণ বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না, আবার পণ্যের সরবরাহ যাতে বিঘœ না হয়। আর বেশি বাড়ানো হলে তা দিন শেষে ভোক্তাকে পরিশোধ করতে হবে। গতকাল একটা কমিটির মিটিং ছিল সেই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত আমি জানি না।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে বার্থ অপারেটরদের বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে অনবোর্ড অপারেশন চার্জ নিয়ে বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নিজেরা যেন বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করে, তা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়।