২০১০ সালের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী: পোর্টফোলিও এখনও তলানিতে

 

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সাত বছর পার হলেও পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ধসের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের শেষদিকে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিনিয়োগকারীরা এখনও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাদের পোর্টফোলিওতে লোকসান রয়ে গেছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। কবে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আসবে আর তারা লোকসান কাটিয়ে উঠবেন সে আশায় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০-১১ সালে অল্প দিনের ব্যবধানে বাজারে অধিকাংশ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। হুজুগে মেতে মৌলভিত্তি যাচাই না করেই বিনিয়োগকারীরা এসব অতিমূল্যায়িত শেয়ার কেনেন। পরবর্তী সময়ে বাজারে পতন হলে তাদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয়। যার মাশুল তারা আজও দিয়ে যাচ্ছেন। যারা ২০১০-এর শেষদিকে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সে সময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক প্রায় ১২০০ পয়েন্ট বেড়ে ৮৯১৮-এ অবস্থান করে। আর ডিএসইর লেনদেন গিয়ে দাঁড়ায় ৩২৪৯ কোটি টাকায়। কোনো কোনো শেয়ার ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর পরপরই বাজারে ধস নেমে আসে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একদিনের ব্যবধানে সূচকের পতন হয় ৬০০ পয়েন্ট। পরবর্তী সময়ে সূচক সাড়ে তিন হাজারের ঘরে নেমে যায়। লেনদেন চলে যায় ২০০ কোটি টাকার নিচে। সে সময় যারা অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনেছিলেন, তারা আজও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, নি¤œমুখী বাজারে শেয়ার কিনে সমন্বয় করে লোকসান পোষানো ব্যাকরণসম্মত উপায় বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও কার্যক্ষেত্রে এর উল্টোটা ঘটছে। তারা জানান, সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে আবারও বিনিয়োগ করেছেন তারা। কিন্তু এখনও তাদের লোকসানের অঙ্ক কষতে হচ্ছে।

শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, ২০১০ সালে পতনের পর তিনি ৫০ লাখ টাকার পোর্টফোলিওতে নতুন করে ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে শেয়ারদর আরও নি¤œমুখী হয়ে সমন্বয়ের বদলে লোকসানের বোঝা বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি আরও পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অর্থাৎ ৫০ লাখ টাকার পোর্টফোলিও সমন্বয় করতে বিনিয়োগ করেন ১৭ লাখ টাকা। বর্তমানে তার পোর্টফোলিওতে যে শেয়ার রয়েছে, তার দর ৩৩ লাখ টাকা। তার সবচেয়ে বেশি লোকসান হয় ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি ইউসিবিএলের শেয়ার কিনে। কারণ কয়েক দিনের ব্যবধানে এ শেয়ারটির দর ১২০০ টাকা থেকে ২৭০০ টাকায় চলে যায়। অধিক লাভের আশায় এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনেন তিনি। বিনিয়োগকারী জিহাদুল ইসলামের প্রধান পেশা শেয়ার ব্যবসা। তিনি ২০০৯ সালে এক কোটি টাকার বিপরীতে দুই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মোট তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন তার পুঁজি রয়েছে এক কোটি টাকার নিচে। ঋণের জন্য প্রতিদিন তাকে সুদ গুনতে হচ্ছে চার হাজার টাকা। তার মতোই করুণ অবস্থা অসংখ্য বিনিয়োগকারীর।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ২০১০ সালের ধস থেকে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। তারা যদি সে সময় অতিমূল্যায়িত শেয়ার না কিনতেন, তবে আজ এমন দশা হতো না। বিনিয়োগকারীদের সব সময় একটি কথা

স্মরণ রাখা উচিত যে, বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে নতুন-পুরনো এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা না বুঝে অন্যের পরামর্শে বিনিয়োগ করেন। তাদের এমন প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে লাভের পাশাপাশি লোকসানের ঝুঁকিও রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের

এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। গুজবে কিংবা কারও কথায় কান দিয়ে পুঁজি বিনিয়োগ ঠিক

নয়। আমরা সে সময় তাদের বার বার সতর্ক করেছিলাম।