শেয়ার বিজ ডেস্ক : ২০১৬ সালে আগের বছরের তুলনায় চীনের রফতানি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় দেশটিতে আমদানিও ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ডলারে এসেছে। এছাড়া চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের বছরের তুলনায় ৩২০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। ডিসেম্বর শেষে দেশটির রিজার্ভ ৩ দশমিক শূন্য ১১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। খবর এএফপি।
চীনের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। ওই সময় দেশটি থেকে মোট রফতানি হয়েছে ২০৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। গত মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ১৬৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৪০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের বছরের তুলনায় ৩২০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। ডিসেম্বর শেষে দেশটির রিজার্ভ ৩ দশমিক শূন্য ১১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জের (এসএএফই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের মাসের তুলনায় কমেছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার হিসাব অনুযায়ী, গত মাসে টানা ছয় মাসের মতো দেশটির রিজার্ভ কমেছে।
অক্টোবর ও নভেম্বরে চীনের রিজার্ভ কমেছিল যথাক্রমে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ও ৭০ বিলিয়ন ডলার, পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে যা ছিল সর্বনিম্ন পতন।
এসএএফইর এক কর্মকর্তা জানান, ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দামের টালমাটাল অবস্থা রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতির চলমান শ্লথগতিতে বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ কমায়ও রিজার্ভে প্রভাব পড়েছে।
বর্তমানে ইউয়ান ডলারের বিপরীতে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে কমার্জ ব্যাংকের সিনিয়র এমার্জিং মার্কেট ইকোনমিস্ট হাও ঝৌ বলেন, অর্থনীতিতে মন্থরতা দেখা দিলে মুদ্রানীতিতে শিথিলতা জরুরি হয়ে ওঠে। কিন্তু চীন থেকে যেভাবে পুঁজির বহির্গমন শুরু হয়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই মুদ্রানীতি কঠোর হবে। চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমবে বলে মনে করেন হাও ঝৌ। তিনি বলেন, স্থানীয় মুদ্রার দ্রুত অবনমন ঠেকাতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভ মুদ্রা বিক্রি করতে হবে। ফলে তারল্য প্রবাহ হ্রাস পাবে।
এছাড়া ২০১৭ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাবে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির সরকারি এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সোমবার সরকারি ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুশিয়ার করে বলেছে, আগামী বছর ইউয়ানের দরপতনও অব্যাহত থাকবে।
চায়না একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স (সিএএসএস) বলেছে, আগামী বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে গড়ে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্য প্রথম দুই প্রান্তিকে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করে আর শেষের দুই প্রান্তিকে হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে।
ওই সময় দেশটির মুদ্রা ইউয়ানের দর আগামী বছরে আরও ৩ থেকে ৫ শতাংশ নেমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবষেক জিন বসোং।
চলতি ২০১৬ সালে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। জিন বসোং বলেছেন, ইউয়ানের দরপতনের কারণে ২০১৭ সালে চীনের রফতানি ৪ থেকে ৬ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া আমদানি বাড়বে ২ থেকে ৪ শতাংশ।
এছাড়া ওই সময় ভোগ্যপণ্যে ২ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে। আর সাকুল্যে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে প্রায় ২ শতাংশ।
সিএএসএসের মতে, আগামী বছর দেশটিতে স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বাড়বে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বাজারে খুচরা বিক্রি বাড়বে ৯ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশটিতে প্রবৃদ্ধির গড় হার হবে ৬ দশমিক ৬ থেকে ৬ দশমিক ৮ এর মধ্যে।
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তি চীন। কিন্তু গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা প্রায় ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি বছরেও দেশটির প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি বজায় থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।