২০২১ সালে ব্যক্তি খাতে ঋণ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা

শেখ আবু তালেব: বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯-এর প্রকোপ বাংলাদেশে শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ওই মাসেই শনাক্তের হার তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সংক্রমণ কমিয়ে আনতে জরুরি ছাড়া সব শিল্প ও সরকারি-বেসরকারি খাতে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। বন্ধ করা হয় সব ধরনের গণপরিবহন। ফলে থমকে যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

২০২০ সালের শেষের দিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে শুরু হতে থাকে। এতে বেড়ে যায় ঋণপ্রবাহ। আবার সরকারের পক্ষ থেকে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হয় বছরটিতেই। ২০২০ সালে সর্বোচ্চ হারে করোনা সংক্রমণের সময়েই ঋণগুলো বিতরণ করা শুরু হয়। ফলে ২০২০ সালে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় আট দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বছরটিতে বেসরকারি খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ১৫১ কোটি টাকা।

২০২১ সালের পুরোটা সময়ই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল ছিল। উদ্যোক্তারা সচল রেখেছিলেন উৎপাদন কর্মকাণ্ড। যদিও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালেও প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে বছর শেষে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২১ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এই সময়ে দেশীয় উৎসের পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ২০২১ সালে বিদেশি উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, যা দেশীয় উৎস থেকে নেয়া মোট ঋণের ১৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশীয় ব্যাংক খাত থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশি উৎস থেকে নিলে সুদের হার আরও কমে যায়। এজন্য এখনও অনেক উদ্যোক্তা স্বল্প সময়ের জন্য বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সাল শেষে বেসরকারি খাতে দেয়া ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কিছুটা, যা ২০১৯ সালের চেয়ে কিছুটা বেশি, কিন্তু ২০১৮ সালের চেয়ে কম। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির ধারা এখন তিন বছর আগের অবস্থানে রয়েছে। যদিও বেসরকারি খাতে যাওয়া এসব ঋণের বড় অংশই প্রণোদনার প্যাকেজের আওতায় দেয়া। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, এসব ঋণের সঠিক ব্যবহার কতটা হয়। বিতরণকৃত এসব ঋণের সিংহভাগই বড় উদ্যোক্তা ও শিল্পগ্রুপের কাছে গেছে। যদিও ক্ষুদ্র ও মাঝারি তথা এসএমই খাতের ঋণপ্রবাহ গেলে প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়ত।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. রিজওয়ান রহমান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার ঋণ বিতরণে গড়িমসি করছে ব্যাংকগুলো। এখনও বরাদ্দ দেয়া ঋণের মধ্যে মাত্র ৪৮ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। ৫২ শতাংশই বিতরণ হয়নি। অথচ দেশের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদানই সবচেয়ে বেশি। এ খাতে ঋণ বাড়লে অর্থনীতি আরও সচল হতো। অনেক মানুষের জীবন ব্যয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, দেশের বেসরকারি খাতে ২০১৮ সালে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। বছরটিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এর পরের বছর ২০১৯ সালে ৯৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০ সালে বিতরণ হয় ৮৮ হাজার ১৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি আট হয় দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০২১ সালে বিতরণ হয় এক লাখ ২১ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। এই সময়ে আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।