শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্রিটেনের অর্থনীতি ২০২৩ সালে শূন্য দশমিক চার শতাংশ সংকুচিত হওয়ার পথে। দেশটিতে একদিকে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বন্ধ রেখেছে। তাই বলা হচ্ছে, সেখানে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রবণতা থাকবে। গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের কনফেডারেশন অব বিজনেস ইন্ডাস্ট্রি (সিবিআই) এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর: রয়টার্স।
সিবিআইয়ের মহাপরিচালক টনি ড্যানকার বলেন, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি, নিন্মমুখী সূচক, উৎপাদন ও বিনিয়োগে পতন। কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নেতিবাচক সূচকগুলো ২০২৩ সালের বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিবিআই চলতি বছরের জুনে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল পরিস্থিতি তার চেয়ে এখন খারাপ। জুনে ২০২৩ সালের জন্য এক দশমিক শূন্য শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া দেশটির জিডিপি ২০২৪ সালের মাঝামাঝির আগে কভিড-১৯ মহামারির আগের পর্যায়ে আসবে না বলে মনে করা হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে। এ হামলার পর তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়ে ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে অন্যতম ব্রিটেন। দেশটিতে বেড়ে যায় গ্যাস ও তেলের দাম। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাছাড়া মহামারির পর শ্রমবাজারও ঘুরে দাঁড়ায়নি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিনিয়োগ ও উৎপাদন।
সিবিআই জানিয়েছে, ২০২৩ সালে দেশটিতে বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে পাঁচ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বেকারত্বের হার তিন দশমিক ছয় শতাংশ।
মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় প্রতি মাসে সে দেশের মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অক্টোবরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১ শতাংশে, যা ১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রান্ট ফিজনার জানিয়েছেন, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। খাদ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি-সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। দুধ, পনির ও ডিমের দাম এখনও বাড়ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, যা ভোক্তাদের চাহিদায় প্রভাব ফেলেছে।
সিবিআইয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বছর মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশের নিচে চলে আসবে। ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি নামবে তিন শতাংশের নিচে।
সিবিআইয়ের পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)। সংস্থার শঙ্কা, আগামী বছর ইউরোপের দুর্বল অর্থনীতির একটি হবে যুক্তরাজ্য। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ওইসিডি বলেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগবে যুক্তরাজ্য। সাতটি ধনী দেশ, অর্থাৎ জি-৭ গ্রুপের মধ্যে আগামী বছর সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যুক্তরাজ্য জ্বালানিতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না।
ওইসিডির মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অর্থনীতি আগামী বছর দুর্বল হবে, তবে যুক্তরাজ্য ছাড়া বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে শুধু জার্মানির জিডিপি সংকুচিত হবে বলে তাদের শঙ্কা।
গত মাসে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক বলেন, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতিগুলো আগামী বছর গতি হারাবে। তবে এদের মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হবে। সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হবে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে তাদের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশে।
সিবিআইয়ের মহাপরিচালক ড্যানকার বলেন, যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আমরা এক দশকের প্রবৃদ্ধি হারাতে দেখব।