শেখ আবু তালেব: জীবিকা, শিক্ষা বা ভ্রমণ যে কারণেই হোক মানুষ এখন বহির্মুখী। এজন্য নগরপানে ছোটা মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় এখন সোয়া এক কোটি মানুষের বসবাস। রয়েছে চারপাশে থাকা নদীর দূষণ। যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। তারপরও বাড়ছে মানুষের ভিড়। এতে গত ২০ বছরে জিডিপিতে ঢাকার অবদান বেড়েছে অনেকটাই। ভালো-মন্দের মিশেল থাকা এই ঢাকা শহরই ২০৩৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শহরের একটিতে পরিণত হবে। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।
সম্প্রতি ২০৩৫ সালে বিশ্বের শহরগুলোর অবস্থান কেমন হতে পারেÑতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি। জনসংখ্যা, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), অর্থনীতির আকার এই তিন সূচকের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন ও জনংখ্যার বিবেচনায় শীর্ষ ১০ শহরের তালিকায় উঠে এসেছে ঢাকা।
ডব্লিউইএফের তথ্যানুযায়ী, ২০৩৫ সালে তিন কোটির বেশি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ শহর হবে ঢাকা। আর সাত দশমিক ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসবে।
জানা গেছে, ঢাকার উন্নয়নে ২০১৫ সালে একটি ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা ২৬ মিলিয়ন অর্থাৎ দুই কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ঢাকা সিটির চারপাশে থাকা শহর অর্থাৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, তারাব পৌরসভা, সাভার ও মুন্সীগঞ্জের কিছু এলাকাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেমন হতে পারে ২০৩৫ সালের ঢাকা এ বিষয়ে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকার সব কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে ঘিরেই চলছে। এটি হচ্ছে ঢাকার কেন্দ্র বা মূল ঢাকা। আসলে ঢাকা নিয়ে ভাবতে হলে ঢাকার চারপাশে থাকা গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, তারাব পৌরসভা, সাভার ও মুন্সীগঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে। এক কথায় বৃহত্তর ঢাকা বলা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গত ২০ বছরে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে। ২০৩৫ সালে এটি আড়াই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। তবে সেবার মান সেভাবে বাড়েনি। বিশেষ করে গণপরিবহন ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। চারদিকের নদী দূষণে ভরা। মূল ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এসব ভালো-মন্দের মিশেল হচ্ছে ঢাকা।
ঢাকা এখনই বৃহত্তর ঢাকায় পরিণত হয়েছে। তাই চারপাশে থাকা শহর, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে সেবার মান উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। ২০৩৫ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে শিশু, নারী ও বয়স্কদের নিরাপত্তার বিষয়টি। এত বিশাল জনসংখ্যার শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখা আসলেই মুশকিল। এজন্য নগর ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিতে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই বলে মনে করেন প্রবীণ এই বিশেষজ্ঞ।
ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩১ দশমিক দুই মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি ১২ লাখ। জনসংখ্যার বিবেচনায় তখন ঢাকা হবে বিশ্বের চতুর্থ শহর। প্রথম অবস্থানে উঠে আসবে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। তখন জাকার্তার জনসংখ্যা দাঁড়াবে তিন কোটি ৮০ লাখে। তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষের শহরে পরিণত হবে জাপানের টোকিও। আর চীনের চোংকিং শহরটির জনসংখ্যা দাঁড়াবে তিন কোটি ২২ লাখে।
অন্যদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় ঢাকার অবস্থান হবে দ্বিতীয়। তখন ঢাকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাত দশমিক ছয় শতাংশ। প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে থাকবে যথাক্রমে ভারতের বেঙ্গালুর ও মুম্বাই।
যদিও পূর্ভাভাসের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেছে ডব্লিউইএফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক গতির ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈষম্য, অতি নগরায়ণ ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার নেতিবাচক প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে শহরের উন্নয়ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানী ঢাকার উন্নয়নে প্রয়োজন একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। সেখানে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো, তিতাস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সড়ক পরিবহনসহ নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে একটি অধিদপ্তর বা নগর প্রশাসন গঠন করা যেতে পারে, যা ঢাকার উন্নয়নে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না।