২০৩৬ পর্যন্ত কর দিতে হবে না বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে

বিশেষ প্রতিনিধি: বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিভিন্ন সময় নানা সুযোগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে অন্যতম হলো কর অব্যাহতি। আগে এ সুযোগ নির্ধারিত সময়ের জন্য দেয়া হতো। তবে এবার নতুন-পুরোনো সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একযোগে কর অব্যাহতি দেয়া হলো। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করলেই এ ছাড় পাবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। যদিও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কর অব্যাহতির বাইরে থাকবে।

১৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এসআরওতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইনকাম-ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৪-এর সেকশন-৪৪ এর সাব-সেকশন (৪)-এর ক্লজ (বি)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কতিপয় শর্তসাপেক্ষে কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ব্যতীত সব প্রাইভেট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে কর অব্যাহতি প্রদান করেছে। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো, যেসব কোম্পানি ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে শুধু তারাই ২০৩৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর কর অব্যাহতি পাবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, আগামী এক বছরের মধ্যে এলএনজি/গ্যাসচালিত তিন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এগুলো হলো, ভারতের রিল্যায়েন্স, বাংলাদেশের সামিট ও ইউনিট গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত এপ্রিল পর্যন্ত এগুলোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি ছিল যথাক্রমে ৯৪, ৮৮ ও ৯৫ শতাংশ। এছাড়া বেশকিছু সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরুর পথে আছে। মূলত বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুবিধা দিতেই এ বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন এসআরওতে পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি সুযোগ পেয়ে গেছে।

ব্যবসা থেকে অর্জিত আয় ছাড়াও আরও কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। এর মধ্যে রয়েছে, কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিদের আয়ের ওপর বাংলাদেশে আসার তিন বছর পর্যন্ত কর দিতে হবে না। কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত বৈদেশিক ঋণের প্রদেয় সুদের ওপরও কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় রয়ালিটি, কারিগরি জ্ঞান (টেকনিক্যাল নো-হাউ) এবং কারিগরি সহায়তার ফির ওপরও কর অব্যাহতি দেয়া হবে।

এদিকে যেসব কোম্পানি ২০২৪ সালের ৩০ জুনের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে, তাদেরও শর্তসাপেক্ষে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর পাঁচ বছর পর্যন্ত শতভাগ কর অব্যাহিত পাবে। এরপর তিন বছর (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই বছর (নবম ও দশম) ২৫ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি পাবে।

কর অব্যাহতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অবশ্যই যথাযথভাবে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে এবং অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিধানাবলি পালন করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পাওয়ার সেক্টর জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশে নির্ধারিত সব শর্ত পূরণ করতে হবে এবং পলিসি অনুযায়ী কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে হবে।

সূত্রমতে, এর আগেও তিন দফায় বিদ্যুৎ খাতে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তবে সেগুলোয় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার নির্ধারিত একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো। এর মধ্যে সর্বশেষ

 কর অব্যাহতি দেয়া হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। তাতে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে উৎপাদনে আসার শর্ত দেয়া হয়েছিল। শুধু ওই দেড় বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসা কোম্পানিগুলো ২০৩৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর অব্যাহতি পেত।

এর আগে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে কর অব্যাহতি নিয়ে দুটি পৃথক এসআরও জারি করা হয়। এর মধ্যে একটিতে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে আসা কোম্পানিগুলো ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি পাবে। আরেকটি এসআরওতে বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে উৎপাদনে আসা কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর পাঁচ বছর পর্যন্ত শতভাগ কর অব্যাহিত পাবে। এরপর তিন বছর (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই বছর (নবম ও দশম) ২৫ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি পাবে।

যদিও গত ১৯ জুন জারিকৃত এসআরওতে আগের তিনটি এসআরও রহিত করা হয় এবং নতুন শর্ত কার্যকর করা হয়। এতে পুরোনো ও নতুন সব বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন থেকে আগামী ২০৩৬ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি পাবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেন, যেসব কোম্পানিকে একবার ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া অনৈতিক। কারণ এতে পুরোনো কেন্দ্রগুলো বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে। এছাড়া পুরোনো কেন্দ্রগুলোকে নতুন করে কর অব্যাহতি দেয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ ও ২০২০ সালের এসআরও তিনটিতে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আয়কর অর্ডিন্যান্সের সেকশন ৭৫ অনুসারে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। তবে ১৯ জুন জারিকৃত নতুন প্রজ্ঞাপনে এ ধারাটি থেকে কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।