রহমত রহমান: আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের ছোট-বড় সব কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরীক্ষার মাধ্যমে এবার ২০টি বড় আবাসন কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে ২০টি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে আবাসন কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মূসক গোয়েন্দা ৩৫টি কোম্পানির ফাঁকি তদন্ত করছে। তবে পর্যায়ক্রমে সব কোম্পানির নিরীক্ষা করবে এনবিআর। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির আহ্বায়ক ও এনবিআর সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, আবাসন কোম্পানিগুলো কৌশলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট বা মূসক ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পানির ফাঁকি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বড় কোম্পানির। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ও এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) একেএম নুরুল হুদা আজাদ ২০টি বড় আবাসন কোম্পানির নাম ঘোষণা করেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেÑশেলটেক প্রাইভেট লিমিটেড, ডোম-ইনো কনস্ট্রাক্টশন লিমিটেড, রূপায়ণ রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, সুবাস্তু ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, সিটি হোমস লিমিটেড, আফতাব রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, এএনজেড প্রোপার্টিজ লিমিটেড, আমিন মোহাম্মদ কনস্ট্রাক্টশন লিমিটেড, জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেড, প্যারাডাইজ হোমস লিমিটেড, আমিন মোহাম্মদ প্রোপার্টিজ ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস লিমিটেড, এনা প্রোপার্টিজ লিমিটেড, অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি লিমিটেড, বে ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেড, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও মোনেম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। সূত্র আরও জানায়, সভায় দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার জানান, ৫৫টি বাণিজ্যিক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমিন মোহাম্মদসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। তবে সভায় সিদ্ধান্ত হওয়া ২০টি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে। সভায় দ্রুত ২০টি প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি খুঁজে বের করে প্রতিবেদন তৈরি ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, টাস্কফোর্সের নির্দেশনার ২০টি কোম্পানির কাছে ভ্যাট পরিশোধ-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে ভ্যাট পরিশোধের হালনাগাদ তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, সিএ ফার্মের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ২০১১ সাল থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন কপি, দাখিলপত্র (রিটার্ন), ক্রয়-বিক্রয় পুস্তক, আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের বিল অব এন্ট্রি এবং মূসক চালান (মূসক চালান, ক্যাশ মেমো, ভাউচার), বিক্রয় বা সরবরাহ হিসাব পুস্তক ও ট্রেজারি চালানের কপিসহ মূসক-সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির একজন সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, আবাসন কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি বিষয়ে টাস্কফোর্স কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। সহসাই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, আবাসন কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি তদন্তে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩৫টি কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি খুঁজে বের করতে নিরীক্ষা দল গঠন করা হয়েছে। নিরীক্ষা দল এসব কোম্পানির কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে কিছু কিছু কোম্পানির নিরীক্ষা শেষের পথে রয়েছে বলে মূসক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন শেয়ার বিজকে বলেন, আবাসন খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে হয়রানির উদ্দেশ্যে কোম্পানি নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। উল্লেখ্য, রিহ্যাবের হিসাবে দেশে এক হাজার ২০৩টি প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ও প্লট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএল) হিসেবে ২৩১টি প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ও প্লট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সারা দেশে দেড় হাজার আবাসন ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
