Print Date & Time : 31 July 2025 Thursday 4:38 am

২০ হাজার কোটি টাকা চান রেস্তোরাঁ মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৫ আগস্টের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রাখতে চান মালিকরা। সেটা যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অর্ধেক আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ আবার চালু করার দাবি জানিয়েছেন মালিক সমিতি। তারা বলছেন, চলমান বিধিনিষেধে রেস্তোরাঁগুলো শুধু অনলাইন/টেকওয়ের মাধ্যমে খাবার বিক্রি করতে পারছে। কিন্তু এ সেবার অন্তর্ভুক্ত রেস্তোরাঁর সংখ্যা সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ। এ কারণে সারাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকায় দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

অন্যদিকে মহামারি কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যবসা চলমান রাখার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। একই সঙ্গে হোটেল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সরকারের প্রতিনিধির মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

করোনা পরিস্থিতিতে নানা সমস্যায় জর্জর রেস্তোরাঁ খাতের সমস্যা তুলে ধরে গতকাল সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে রেস্তোরাঁ খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কখনও অর্ধেক আসনে বসিয়ে আবার কখনও শুধু অনলাইন বা টেকওয়ের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা সীমিত রেখেছি। কিন্তু টেকওয়ে দিয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। টেকওয়ে সেবার আওতায় রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২ থেকে ৩ শতাংশ।’

রেস্তোঁরা মালিক সমিতি জানায়, সারাদেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে জড়িত, যারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনার প্রভাবে সারাদেশের শতকরা ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংগঠনের মহাসচিব বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হাহাকারের টেলিফোন আসছে। সবাই শুধু বলে ‘আমাদেরকে বাঁচান’। ব্যবসায় আর টিকে থাকতে পারলাম না, যা আমাদের কাঁদায়। আমাদের জন্য এটা খুবই কষ্টদায়ক। মালিকের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হƒদয়বিদারক কষ্ট করছে। এটা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দূরভিসন্ধিমূলক। কুচক্রী মহলের দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার পথ। এখানে বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। যারা এখন খাবার টেকওয়ের ব্যবসায় জড়িত।’ তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা কোনো আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছি না। পচনশীল পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া যাবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার কারণে আমরা ঋণ পাচ্ছি না। এছাড়া এ খাতকে শিল্প ঘোষণা না করায় ব্যাংকের আগ্রহ নেই। যদিও রাজস্ব খাতে এ খাত অনেক বড় অংশীদার এবং পর্যটনশিল্পের প্রধান নিয়ামক। রেস্তোরাঁ মালিকরা বলেন, এ পরিস্থিতির পরেও ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং জাতীয়  রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। সরকারি লোক নয়, পাড়া-মহল্লার ভাড়া করা লোক দিয়ে এনবিআর আমাদের হয়রানি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা সরকারের কাছে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা। তাও যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু করা। হোটেল রেস্তোরাঁর জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, যা সহজশর্তে, স্বল্প সুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়া। শ্রমিকদের মোবাইল ফোনে অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেয়ার মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা মাসিকভাবে খাদ্য সাহায়তা দেয়া। হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীন আনা। এছাড়া ই-কমার্স টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণ করা।

তিনি বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলমান রাখার জন্য চলতি মূলধন হিসেবে এসএমই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়া হোক। গেল বছর করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এ খাতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেশের প্রচুর রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে এবং বেশিরভাগ রেস্তোরাঁর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। মালিক সমিতির নেতারা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয়ের সঙ্গে এসব প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রধানমন্ত্রী দয়া করে এ সেক্টরের মানবিক দিক বিবেচনা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।’

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি গাজী মো. ওসমান গনি, প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন, প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব ফয়সাল মাহবুবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।