মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে শক্তিশালী খাত হিসেবে চিহ্নিত ব্যাংকিং খাতের দরপতন থামছেই না। গতকাল এ খাতের ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২১টিরই দরপতন হয়েছে। অপরিবর্তিত ছিল ২টির দর। নামমাত্র দর বেড়েছে ৭টি প্রতিষ্ঠানের। জানা গেছে, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছেন। কারণ তাদের ওপর ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যারা ইতোমধ্যে ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ ইতোমধ্যে তাদের লোকসানের বোঝা
ভারী হয়ে গেছে।
সম্প্রতি বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর পর অন্য খাতের বিনিয়োগকারীরা যেখানে প্রতিদিন লাভের হিসাব কষছেন, সেখানে উল্টো হিসাব করতে হচ্ছে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর নাজুক অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিনই এক-দুই শতাংশ করে পুঁজি উধাও হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
গতকাল দর হারানো ব্যাংকের মধ্যে এবি ব্যাংকের প্রতি শেয়ারের দর এক টাকা কমে লেনদেন হয় ২২ টাকা ৫০ পয়সায়। ব্যাংক এশিয়ার প্রতি শেয়ারের দর ২০ পয়সা কমে দিন শেষে ১৮ টাকা ৬০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানির মধ্যে ইবিএলের দর কমেছে ৪০ পয়সা। সর্বশেষ লেনদেন হয় ৩৩ টাকা ৫০ পয়সায়। এছাড়া এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে ১০ পয়সা। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর ২০ পয়সা কমে লেনদেন হয় ১৪ টাকা ৭০ পযসায়। একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ৪০ পয়সা কমে ২৩ টাকা ৮০ পয়সায়, যমুনা ব্যাংকের ২০ পয়সা কমে ১৮ টাকা ৭০ পয়সা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেযার ২০ পয়সা কমে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা, এনবিএলের শেয়ার ১০ পয়সা কমে ১৪ টাকায় লেনদেন হয়। এছাড়া এনসিসি ব্যাংকের
শেয়ার ২০ পয়সা কমে ১৪ টাকায়, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার ২০ পয়সা কমে ২১
টাকায় ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার ১০ পয়সা কমে ১২ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়। অন্যদিকে রূপালী ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবিএল ও উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে ১০ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত।
অন্যদিকে কিছুটা দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকের তালিকায় ছিল এমটিবি, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এদিকে গতকাল আগের দরে স্থির ছিল আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও এসআইবিএলের শেয়ার।
মোরশেদ আলী নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকি খাতে বিনিয়োগ নিরাপদ ভেবে চলতি বছরের প্রথম দিকে পুঁজিবাজারে এসে কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু দুই মাস না যেতেই মূল পুঁজির ১৩ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক অবস্থা করুণ হবে।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। আগে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আস্থার খাত ছিল ব্যাংক। কিন্তু ২০১০-এর ধস-পরবর্তী সময়ে ঢালাও দুর্নীতির কারণে এ খাতের শেয়ারের দর কেবলই কমেছে। ছয় বছরে
শেয়ারের দর কমেছে ২৮-৯১ শতাংশ। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারদর গত ডিসেম্বরেও ফেসভ্যালুর নিচে ছিল। গত কয়েক বছর ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দিলেও শেয়ারদর এখনও তলানিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালে ধসের পর বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারি, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির মতো বড় বড় ঘটনা ঘটে। ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ইউসিবিএল, এনসিসি ব্যাংকসহ বেশিরভাগ ব্যাংক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরিচালক ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। গত কয়েক বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির পর অনেক ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালেও আস্থা ফিরে আসেনি বিনিয়োগকারীদের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকে অর্থ রাখার বিষয়টি মোস্ট লিকুইট। একজন গ্রাহক চাইলে তা পান। এতে পুঁজি হারানোর ভয় থাকে না। তবে পুঁজিবাজারে মুনাফার হার বেশি। একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে ব্যাংক শেয়ারের দর তলানিতে থাকার কারণ হচ্ছে খাতটিতে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম। অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারছে না, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ব্যাংকিং খাতে।