শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে মধ্যপ্রচ্যের তেলনির্ভর দেশগুলোর প্রতি ঝুঁকছে চীন। সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে চীন ৫০ বছর মেয়াদি জ্বালানি তেল সরবরাহের চুক্তি করে। এ লক্ষ্যে চীনকে ব্যাপকহারে তেল দিচ্ছে সৌদি আরব। এবার চীনের নজর তেলনির্ভর অন্যতম ক্ষতমাশালী দেশ ইরানের দিকে। ইরান থেকে তেল কিনতে ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে এবার ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও চীন। গতকাল শনিবার তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ চুক্তিতে সই করেন। খবর: এএফপি, আল-জাজিরা।
শুক্রবার রাতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তেহরানে পৌঁছান। চুক্তি সইয়ের আগে গতকাল প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনির উপদেষ্টা ড. আলী লারিজানিসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইরান ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে তেহরান। গতকাল স্বাক্ষরিত চুক্তির ফলে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হলো।
দ্বিপক্ষীয় এ চুক্তিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ রয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সহযোগিতাই মূল বিষয় বলে জানা গেছে। এছাড়া এ চুক্তিতে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনায় ইরানের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে সহযোগিতা গড়ে তুলতেও দুই দেশ চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে সম্প্রতি ইরানের মন্ত্রিসভা চীনের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইরান সফরের সময় কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।
ইরান-চীন সম্পর্ক কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ: এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক হচ্ছে কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠকে গতকাল এ কথা বলেন তিনি। রুহানি বলেন, দুই দেশই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী।
এ সময় রুহানি আন্তর্জাতিক ফোরামে ইরানের অবস্থান, বিশেষ করে পরমাণু সমঝোতা ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকামিতার মোকাবিলায় চীনের সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও দুই দেশের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ সময় তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং চীন থেকে করোনার আরও ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, চীন সব সময় ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে এসেছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ হচ্ছে একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রতি সমর্থন নেই।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত চীনকে ব্যাপক ভিত্তিতে তেল সরবরাহ করবে।