হৃদরোগ হাসপাতাল

২৫ শতাংশ হার্টের রিং বিনা খরচে দেয়ার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২৫ শতাংশ হার্টের রিং (স্টেন্ট) বিনা খরচে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, শুনেছি বেশিরভাগ রোগীকে তাদের ভিটামাটি বিক্রি করে রিং লাগাতে হয়, ভাল্ব প্রতিস্থাপন করতে হয়। আমরা রোগীদের সুবিধার্থে শিগগির এই হাসপাতালে ২৫ শতাংশ স্টেন্ট বিনা খরচে দেয়ার ব্যবস্থা করব। এমনকি একপর্যায়ে এই হাসপাতালে সব স্টেন্টই বিনা খরচে দেব।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় হƒদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জেনেছি জাতীয় হƒদরোগ হাসপাতালে বছরে ৯ হাজার স্টেন্ট লাগানো হয়। এখানে মাত্র ৬০০ স্টেন্ট সরকারের পক্ষ থেকে বিনা খরচে দেয়া হয়, যা পরিমাণে খুবই কম। সব স্টেন্ট হয়তো এখন ফ্রি দিতে পারব না, তবে চেষ্টা করব যেন বছরে অন্তত ২৫ শতাংশ স্টেন্ট (২ হাজার ৫০০) দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্রæতই এ ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, সারাদেশে বছরে ৩৫ হাজার স্টেন্ট ব্যবহার হয়। এর মধ্যে হƒদরোগ হাসপাতালে যেসব স্টেন্ট রোগীরা পায়, আমরা খুবই সুলভ মূল্যে সেগুলো দেয়ার চেষ্টা করি। এসবের মধ্যে বর্তমানে ৬০০ স্টেন্ট ফ্রি দেয়া হয়, এটা খুব বেশি নয়। সব হয়তো এখনই ফ্রি করতে পারব না। চেষ্টা করব যেন অন্তত ২৫ শতাংশ স্টেন্ট যেন দেয়া যায়, যেগুলোর দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এটা বেশি টাকা নয়। এক সময়ে আমরা এই হাসপাতালে সব স্টেন্টই বিনা খরচে দেয়া শুরু করব।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। দেশে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে দেড় লাখ, প্রতি মাসে ১২ হাজার, দৈনিক ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। আমরা কভিডে ১০ থেকে ২৫ জন মারা গেলেই সেটিকে বড় করে দেখি কিন্তু দৈনিক যে হƒদরোগে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেটি আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না।

সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করি, ওজন কম রাখি, স্ট্রেস কম নিই, জীবনব্যবস্থা উন্নত করি, বøাড প্রেশার, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, তাহলে হার্টে বøক ঠেকানো যাবে। হার্টে কোলেস্টোরেল বেড়ে গেলেই হার্টে বøক দেখা দেয়। এগুলো এখন সব মানুষই জানে। তবে মানার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।

হৃদরোগ হাসপাতালের সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে ২০০-২৫০ রোগী ভর্তি হয়। আউটডোরে ১ হাজার ২৫০ জন রোগী দৈনিক সেবা নেয়। অথচ আগে হার্টের সার্জারির জন্য রোগীদের আশপাশের দেশে চলে যেতে হতো কিন্তু এখন হƒদরোগ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে একটা হার্টের সার্জারি করতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়, সিঙ্গাপুরে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা লেগে যায়। অথচ বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখে সার্জারি হয়ে যায়।

মন্ত্রী বলেন, আমরা চারটি সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এগুলো হলোÑপোলিও, টিটেনাস, ফাইলেরিয়াসিস ও কালাজ্বর। বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ কালাজ্বর মুক্ত হয়েছে। এজন্য করোনার মধ্যে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন বছরের রিপোর্ট দেখেছে।

জাহিদ মালেক বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকাটি একটি মেডিকেল হাব। অনেক বড় ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিশু হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, হƒদরোগ হাসপাতাল হয়েছে। সব ইনস্টিটিউটকে একত্র করতে অভ্যন্তরীণ একটি রোড তৈরির যে প্রস্তাবনাটি এসেছে, এটি খুবই যৌক্তিক। আমি আমার অবস্থান থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ আরও অনেকে।