২৮ অক্টোবর ১০ ডিসেম্বরের পরিণতি হবে বিএনপির : ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির পরিণতি হবে ১০ ডিসেম্বরের মতো। ওই দিন (গত বছরের ১০ ডিসেম্বর) তারা গোলাপবাগ গরুর হাটে খাদে পড়ে গিয়েছিল। এবার কোথায় যাবে সেটা দেখার অপেক্ষা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১০ ডিসেম্বর (২০২২) বেগম জিয়া দেশ চালাবে বলে দম্ভোক্তি করেছিল। ১০ ডিসেম্বরের মতো ২৮ অক্টোবরও তাদের একই পরিণতি হবে। শুধু চিন্তা করছি কোথায় গিয়ে খাদে পড়ে। ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগের গরুর হাটের খাদে পড়েছিল, এটা এবার কোথায় যায় সেটা দেখার অপেক্ষা।

বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা ঘুম থেকেই উঠেই মিথ্যা কথা বলে। সত্য কথা কখন বলে? সত্য বলার মানসিকতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। এ ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রয়োগ করার বাস্তবতা নেই। আদালত সঠিকভাবে উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে এনে ২০০১ ও ২০০৬ সালের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের মানুষ চায় না।

পূজা নিয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয়ভাবে বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা ওয়াকিবহাল। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে খোঁজখবর নিয়েছেন। গোটা ব্যাপারটা নিয়ে দল থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ অপকর্ম করে থাকে, আওয়ামী লীগের চেতনার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কাজ করে থাকলে সেটা নিয়ে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্প্রতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’। তার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। প্রতিবাদে গত ১৪ অক্টোবর কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছিল সংগঠনটি। সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলা করার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে মামলাও করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটের সময় হিন্দুরা না হলে আমাদের চলে না। কিন্তু হিন্দুরা যখন বিপদে পড়বে, তখন আমরা তাদের পাশে থাকি না। এটাতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না। আমার ভোটের সময় তাদের প্রয়োজন; অথচ তাদের জীবনযাপনে, তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনে আমাদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে, যারা এরকম ঘটনা ঘটায় তারা দুর্বৃত্ত। আমি এদের হিন্দু-মুসলমান বুঝি না। এদের পরিচয় এরা দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্ত মুসলমানদের মধ্যে নেই বলার উপায় নেই।

আওয়ামী লীগের মধ্যেও কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করে বলে স্বীকার করেন ওবায়দুল কাদের। ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন জায়গায় হওয়া সহিংসতা মোকাবিলায় সাংগঠনিক ব্যর্থতা ছিলও বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এবার যাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো ঘটনা না ঘটে তার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পার্টির সবাই খুব ভালো মানুষ এটা দাবি করার কোনো উপায় নেই। কারণ কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, বাড়িঘরে আগুন লাগে, জমি দখল করে। একটা অসভ্য উদ্দেশ্যে অনেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকে। অনেকে মানসিকভাবে এদের কথাবার্তা বলার স্বাধীনতা থাকে না। তখন সেখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিটা যদি গালিগালাজের সঙ্গে উচ্চারিত হয় সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দলগতভাবে এসব ব্যাপার লক্ষ করছি। এদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক করছি। পুনরাবৃত্তি রোধে এ ধরনের ঘটনার জন্য আমরা কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতেও শুরু করেছি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দপ্তর সম্পাদক মিলন কান্তি প্রমুখ।