শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০০৮ সালে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন মহামন্দার কবলে পড়ে ধুঁকছিল, তখনও শক্ত হাতে নিজেদের সামলেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। দেশটির অর্থনীতি গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম মন্দায় পড়েছে। ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানল, এরপর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় এ অর্থনৈতিক সংকটে দেশটি। খবর: বিবিসি।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অস্ট্রেলিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গত তিন মাসের তুলনায় সংকুচিত হয়েছে সাত শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ কমে জিডিপি। ১৯৫৯ সালে এ জিডিপির হার নির্ধারণ শুরু হওয়ার পরে এটি প্রথম বৃহত্তম পতন। পরপর দুটি প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলে, অর্থাৎ জিডিপি কমলে সেই অর্থনীতি মন্দায় পড়েছে বলে ধরা হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯১ সালের শেষ অবধি মন্দায় পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
একটি অর্থবছরের পরপর কয়েকটি প্রান্তিকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূচক যদি নি¤œমুখী হয়, তবেই মূলত মন্দা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), শিল্প উৎপাদন, চাকরির বাজারসহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক সম্প্রসারণের বদলে সংকোচনের লক্ষণ দেখা দিলেই শঙ্কাটি তৈরি হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সংকটের সময় মন্দা এড়াতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া। সে সময় বড় অর্থনীতির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ছিল অন্যতম, যে মন্দা এড়াতে পেরেছিল। মূলত চীন থেকে প্রাকৃতিক সম্পদের চাহিদা থাকায় তা সম্ভব হয়। তবে এ বছরের শুরু থেকে বিপাকে পড়েছে অর্থনীতি, প্রথমে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ দাবানলের কবলে পড়ে দেশটি। আর এরপরই করোনার সংক্রমণ। সব মিলিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে দেশটির অর্থনীতিতে। অর্থনীতিতে সহায়তার জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের ব্যবস্থা নিলেও দেশজুড়ে বহু ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। জিনিসপত্র ও সেবা খাতে গৃহস্থালি ব্যয় ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার কারণে ৬১ বছরের মধ্যে দেশটি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে।
এর আগে ১৯৯০ এর দশকে মন্দার মুখে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই মন্দা পরের বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। তবে করোনা যেন আরও খারাপ আঘাত করেছে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছিলেন, অর্থনীতি আট শতাংশ সংকুচিত হবে।
তবে এখন পর্যন্ত করোনায় মন্দায় পড়া দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে অস্ট্রেলিয়া। কারণ, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অন্য উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি আরও বেশি সংকুচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সাড়ে ৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ২০ দশমিক চার শতাংশ, ফ্রান্সের অর্থনীতি ১৩ দশমিক আট ও জাপানের অর্থনীতি সাত দশমিক ছয় শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।