Print Date & Time : 4 September 2025 Thursday 6:18 pm

৩০% শেয়ার ধারণে সময় চায় এক্সেলসিয়র সুজ

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারের ওভার দা কাউন্টারে (ওটিসি মার্কেটে) তালিকাভুক্ত কোম্পানি এক্সেলসিয়র সুজ লিমিটেড উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সমন্বিত শেয়ারধারণ ৩০ শতাংশ করার বিষয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। সম্প্রতি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করেছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিতে যেন কোনো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ না দেয়া হয় সে বিষয়েও আবেদন জানানো হয়েছে।

৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের বিষয়ে ২০২০ সালে কমিশন কর্তৃক জারি করা নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে কোম্পানিটির আবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়ে গত বছর ১৫ জুন একটি চিঠির মাধ্যমে কমিশন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে শেয়ার ধারণ বাড়ানোর বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

কোম্পানি থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে প্রায় ১১ শতাংশ করা হয়েছে। কোম্পানিটি বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে থাকায় এবং শেয়ারগুলো ডিম্যাটেরিয়ালাইজড না হওয়ার কারণে স্বল্প সময়ে এত পরিমাণ শেয়ার কেনা অসম্ভব। এছাড়া কাগজের শেয়ারে থাকা ঠিকানায় অনেক শেয়ারহোল্ডারকেই পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে তাদের কাছ থেকে শেয়ার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় কোম্পানি।

এদিকে গত নভেম্বরে ডিএসই শেয়ার ডিম্যাটেরিয়ালাইজড করার ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেয়। কিন্তু শেয়ার ডিম্যাটেরিয়ালাইজড করার জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হয়। ফলে কোম্পানিটি ডিএসইসির কাছে এজিএম না করে শেয়ার ডিম্যাটেরিয়ালাইজড করার অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন জমা দেয়। কিন্তু ডিএসই অনুমতি না দেয়ায় কোম্পানিটি হাইকোর্টে গত ১১ বছরের এজিএম করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এজিএম করার জন্য আদালতের অনুমতি পাওয়া যেতে পারে। কোম্পানি সে সময়ের মধ্যে অনুমতি পেলে একই বছরের জুনের মধ্যে ডিম্যাটেরিয়ালাইজড করবে। এর পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কোম্পানি।

এছাড়া কোম্পানির ব্যবসায়িক অংশীদার হতে চিনের নাগরিক লি ইউপেঙ আবেদন জানিয়েছেন। তিনি কোম্পানির কৌশলগত অংশীদার ও পরিচালক হিসেবে ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে কোম্পানির উপস্থিতিতে লি ইউপেঙ বিএসইসির কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে কোম্পানির বর্তমান সিইও এসএমআই দাস্তগীর এবং সিএফও ইমাম হাসান কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমদের এর সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী লি ইউপেঙকে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানির কৌশলগত অংশীদার ও পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুমোদন চেয়ে কোম্পানি কমিশনের কাছে আবেদন করে।

অপরদিকে কৌশলগত অংশীদার ও পরিচালকের জন্য মূলধন বাড়ানোর লক্ষ্যে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টকে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। কৌশলগত অংশীদার ও পরিচালক করার অনুমোদন পেলে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরে পরিচালদের শেয়ার সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি হবে বলে জানিয়েছে কোম্পানি। এ অবস্থায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশ করার ক্ষেত্রে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়ার জন্য কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া সে সময়ের মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ না করারও আবেদন জানিয়েছে কোম্পানি।

এক্সেলসিয়র সুজ লিমিটেড শতভাগ জুতা প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা এবং অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা।

১৯৯৭ সালে মূলধন ব্যয় এবং কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজনীয়তা মেটানো এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল এক্সেলসিয়র সুজ। তালিকাভুক্ত পর থেকে ২০০৩-২০০৪ অর্থবছর পর্যন্ত, কোম্পানিটি ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু এরপর থেকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থান অবনতি হয়। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি পুনরায় মুনাফায় ফেরে, যা ২০১০-২০১১ অর্থবছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর থেকে কোম্পানির সঠিকভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওটিসি মার্কেট থেকে এক্সেলসিয়র সুজকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বর্তমানের এক্সেলসিয়র সুজের মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৬.৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭০.৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের অপেক্ষায় রয়েছে এক্সেলসিয়র সুজ।